মুরাদকে হারিয়ে কান্না থামছে না বাবা বাদশা মিয়ার/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের ধাওয়া থেকে প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ভেটেরিনারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপিসহ তিন শিক্ষার্থী নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় আহত হন আরও দুজন।

পরিবার ও সহপাঠীদের অভিযোগ, নিহতদের পরিকল্পিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকজন এমনভাবে হামলা করেছে যেন তারা (নিহতরা) দুর্ঘটনায় পড়ে।  

জানা যায়, দরিদ্র পরিবারে জন্ম মুরাদের (২২)। তার বড় ভাই সজীব হোসেন কয়েক দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ছোট ভাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মুরাদ পড়াশোনা শেষে পরিবারের হাল ধরবেন, এই আশা ছিল বাবার।

বিধবা মায়ের সন্তান তৌহিদুল ইসলাম। মা জাহানারা বেগমের আশা ছিল ছেলে পড়ালেখা শেষে চাকরিতে যোগ দেবে। কষ্টের দিন শেষ হবে তার।

সমরেশ বিশ্বাস ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পড়ালেখাও শেষ পর্যায়ে। ছেলে ভালো চাকরি করবে স্বপ্ন ছিল পরিবারের। 

বাকরুদ্ধ মুরাদের স্ত্রী

মুরাদের প্রতিবেশী আওয়াল হোসেন বলেন, মুরাদের বাবার মাঠে এক বিঘা জমি আছে। আর যা জমি ছিল তা ছেলেদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে বিক্রি করেছেন। এখন তিনি গ্রামে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান।

দুই বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন মুরাদ। তার স্ত্রী সুমিদা খাতুন বলেন, ওর সঙ্গে শেষবার যখন কথা হয়, তখন বলেছিল, ‘ক্যাম্পাসে একটু ঝামেলা হয়েছে। নেতারা ঝিনাইদহে ডেকেছে, সেখানে গিয়েছিলাম। তুমি চিন্তা করো না, এখন ফিরে যাচ্ছি।’ কিন্তু কখনো বুঝতে পারেননি এ কথাই হবে শেষ কথা।

ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ডিগ্রি বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়াকে কেন্দ্র করে কলেজের জিএস সজীব ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ভেটেরিনারি কলেজের সাবেক ছাত্র ফাহিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। গত শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি সমাধানের জন্য ঝিনাইদহ শহরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে যান মুরাদ, সজীব ও তাদের সমর্থকরা।

সেখান থেকে ভিপি মুরাদ ও জিএস সজীবসহ ৯ জন তিনটি মোটরসাইকেলে কলেজে ফিরছিলেন। পথে প্রতিপক্ষ ফাহিমের লোকজন তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা সবাইকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তখন ভিপি মুরাদসহ ৩ জন মোটরসাইকেলে করে পালানোর চেষ্টা করেন। পেছন থেকে ধাওয়া দেওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। এতে ভিপি মুরাদ, সাধারণ শিক্ষার্থী তৌহিদ ও শমরেশ ঘটনাস্থলেই মারা যান।

মুরাদের বাবা বাদশা বিশ্বাস বলেন, আমার সন্তানসহ আরও ২ শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।  

তৌহিদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা ও শমরেসের বাড়ি যশোরে। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের মরদেহ নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের জিএস সাজিবুল আহমেদ সজীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই রাতে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা চালানো হয়। কলেজের প্রতিপক্ষ ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফাহিম হাসান সনির গ্রুপ এ হামলা চালায়। মোটরসাইকেলে করে পালানোর সময় আমাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আমাকে আহত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের উপর হামলা ও ধাওয়া করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা।

ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. সোহেল রানা জানান, মারামারির ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ২৮ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নাকি হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এসকেডি