ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলায় গরুর প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমিত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার গরু। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশত গরু  মারা গেছে। এতে খামারি ও কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার যাদপপুর গ্রামের সাহেব আলী। তার ৫টি গরুর মধ্যে দুটি গুরু ভুগছে লাম্পি স্কিন ডিজিজে। গরুগুলোকে সুস্থ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গত প্রায় এক মাস তার চোখে ঘুম নেই। শেষ পর্যন্ত কী হবে তাও তিনি জানেন না। 

একই গ্রামের হাসনা বানু নামে এক গৃহবধূ এনজিও থেকে টাকা নিয়ে তিনটি গরু কিনেছিলেন। লাম্পি স্কিন ডিজিজে সংক্রমিত হয়েছে একটি গরু। ঋণের কিস্তি পরিশোধের আগেই গরুর সংক্রমণে তিনি আজ দিশেহারা। কীভাবে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাবেন তাও তিনি বুঝতে পারছেন না।

সাহেব আলী ও হাসনা বানুর মতো জেলার অনেকেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গরু পালছেন বছরের পর বছর। কিন্তু হঠাৎই দেখা দেওয়া গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের মতো প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে পরিবারগুলো। চিকিৎসা করালেও শেষ পর্যন্ত মারা যাচ্ছে একের পর এক গরু।

প্রাণিসম্পদ অফিস ও স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লাম্পি স্কিন ডিজিজে এখন পর্যন্ত জেলার অন্তত ১০ হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে মারা গেছে অর্ধশত গরু।

খামারি ও কৃষক জাহানারা বেগম, ছবেদা বেগম, ওয়ারেশ আলী, মখলেস শেখ ঢাকা পোস্টকে জানান, এই রোগ খুব ভয়াবহ। প্রথমে গরুর গা গরম হয়ে যায়। তারপর শরীরজুড়ে ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠে। অনেকটা পক্সের মতো। কিছু দিন পর সেগুলো ফেটে রক্ত বের হয়। এ সময় গরু খাবার না খাওয়ায় রোগা হতে শুরু করে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিলেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসুস্থ প্রাণীটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে আবার যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড় দেয়, তাহলে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, জেলার ছয় উপজেলার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা আর হরিণাকুন্ড উপজেলায় এ রোগ বেশী ছড়িয়েছে। আমরা ভ্যাকসিনেশন শুরু করেছি। 

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর