নিহত তিন শিক্ষার্থী

প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের তিন শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরানকে প্রধান আসামি করে ২০ জনের নামে আদালতে হত্যা মামলা করা হয়েছে। 

বুধবার (১২ অক্টোবর) নিহত সাইদুর রহমান মুরাদের বাবা বদিউজ্জামান বিশ্বাস বাদশা বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলটি করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফাহিম হাসান সনি, সহ-সভাপতি তন্ময় চক্রবর্তী, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাদিউজ্জামান আরিফ বিশ্বাস, কর্মী লিয়ন, মুস্তাকিম আহম্মেদ, কাজী ফরহাদ হোসেন, নয়ন মিয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রাব্বি ওরফে অর্ক, সাজেদুর রহমান সাজেদ, আসাদ, তৌফিক, ওলিউল্লাহ, সংগ্রাম জোয়ার্দ্দার, চুন্নু, লালু, সঞ্জু, মো. সাদী, ইকরামুল ইসলাম ও মামুন। তারা সবাই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরানের অনুসারী বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ডিভিএম ডিগ্রির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে হঠাৎ করেই কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সজীবুল হাসানের সঙ্গে ফাহিম হাসান সনির বিরোধ শুরু হয়। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানতে পারেন তাদের ক্যাম্পাসে সংস্কার ও অন্যান্য কাজ বাবদ কয়েকশ কোটি টাকার বরাদ্দ আসবে।

তখন তারা বিভেদ ভুলে গিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরান গ্রুপে যুক্ত হয়। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেন তারা। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি ফাহিম হাসান সনিসহ তার অনুসারীরা। এরপর থেকেই হামলা করে ও মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দমনের চেষ্টা করতে থাকেন সজীবুল হাসানসহ তার অনুসারীদের। সে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা।

বিষয়টি সমাধানের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাগর হোসেন ভেটেরিনারি কলেজের মুরাদ, সজিবুলসহ তাদের অনুসারীদের শহরের স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় ডাকেন। সেখানে আলোচনা করে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলার শিকার হয়ে পালাতে যান মুরাদ, সজিবুলসহ তার অনুসারীরা। একপর্যায়ে সজিবুল পালিয়ে গেলেও বাকি তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। 

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা করছি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাব।

নিহত মুরাদের বাবা বদিউজ্জামান বিশ্বাস বাদশা বলেন, আমার প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের মধ্যে আশার আলো ছিল মুরাদ। এই ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল আমার। কিন্তু নষ্ট রাজনীতির কবলে পড়ে নিভে গেছে তার প্রাণপ্রদীপ। এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।

তিনি বলেন, আমার ছেলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মনেপ্রাণে ধারণ করেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিল। হঠাৎ করেই আমার ছেলেসহ তিনজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হবে- এটা ভাবতেই পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই।

আল-মামুন/আরএআর