আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন শাহের ১৩২তম তিরোধান দিবস আগামীকাল সোমবার (১ কার্তিক)। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নিতে হাজারো ভক্ত-অনুসারীরা দূর-দূরান্ত থেকে ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করেছেন। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে কয়েকশ অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসানো হয়েছে। 

করোনা মহামারির কারণে পরপর দুই বছর লালন মেলা স্থগিত ছিল। এবার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত-অনুসারী, বাউল, সাধু ও বিদেশি লালনভক্ত অনুরাগীরা আখড়াবাড়িতে জড়ো হচ্ছেন। 

ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে বাংলা ১২৯৭ সনের ১ কার্তিক মারা যান। পরবর্তীতে এখানে লালন মেলার আয়োজন শুরু করে লালন একাডেমি।

লালনের আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার ভক্ত-অনুসারীরা দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহ আখড়াবাড়িতে। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে কয়েকশ অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসেছে। কেউ সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে গান গাইছেন, কেউ রান্না করছেন, অনেকেই গাঁজা সেবন করছেন। তারা চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা জড়ো হচ্ছেন ছেঁউড়িয়ায়।

মানিক পাগল নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত ছয় দিন আগে আমি এখানে এসেছি। আমি একজন লালন ভক্ত মানুষ। লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমি এখানে এসেছি। আমার মতো হাজারো  ভক্ত-অনুসারী এখানে এসেছেন। প্রতিদিনই লোকজন আসছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। লাখো মানুষের সমাগম হবে লালন মেলায়।

সাথী-সঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় আসা মোমিন আলী বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে গত কয়েক দিন আগে ছেঁউড়িয়ায় এসেছি। আমরা নিজেরা এখানে রান্নার ব্যবস্থা করেছি। এখানে থাকার ব্যবস্থাও করেছি। লালন ফকিরের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমরা এসেছি। লালন মেলা শেষে আমরা এখান থেকে চলে যাব।

স্থানীয় চায়ের দোকানদার জালাল ও চটপটি বিক্রেতা রিপন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হচ্ছেন।। তারা লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে আসছেন। এতে আমাদের বেচা-কেনা আগের তুলনায় ভালো হচ্ছে।

লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত দুইবার লালন মেলা বন্ধ ছিল। এবার লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা হবে। কয়েকদিন আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করেছেন ভক্ত-অনুসারীরা। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বেশি মানুষের আগমন ঘটতে পারে। 

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, লালন মেলা উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে। 

তিন দিনব্যাপী লালন মেলা অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই  আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে চলবে লালন সংগীত। সেখানে লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা গাইবেন। এরই মধ্যে মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। 

রাজু আহমেদ/আরএআর