ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনরা নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তা ও তাদের বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিতভাবে এ দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির স্বজনদের স্বাক্ষর করা আবেদনটি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বরাবরে ইমেইল ও কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আবেদনের অনুলিপি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, ফেনীর পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে। একই দিন রাতে ১৬ আসামির স্বজনরা সোনাগাজী মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে ডিউটি অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন হস্তান্তর করেন।

লিখিত আবেদনে তারা বলেন, নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হোক। তাদের বাড়ির চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হোক, যাতে তারা নিরাপত্তার অজুহাতে নতুন করে এলাকাবাসীর জানমালের ক্ষতি করতে না পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা আরও উল্লেখ করেন, মামলা হওয়ার পর পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব ও একাধিক ব্যক্তির কাছে পাঠানো নুসরাতের আত্মহত্যা করার ম্যাসেজ গায়েব করে আমাদের স্বজনদের রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করে তাদের শেখানো মতো স্বীকারোক্তি আদায় করেন। ফেনীর পিবিআই প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নুসরাতের পরিবারের সহায়তায় আত্মহত্যাকে হত্যায় রূপান্তর করেন। রিমান্ডে নিয়ে পিবিআই আমাদের স্বজনদের নির্যাতনের পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা আদায় করেন, যার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। তারপর তড়িঘড়ি বিচারের মাধ্যমে আমাদের স্বজনদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

আবেদনে তারা আরও লেখেন, আমরা আমাদের নিরপরাধ স্বজনদের মুক্ত করতে আইনিভাবে ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি নুসরাতের পরিবারের মুখোশ দেশের মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় তারা আগের মতো নতুন নাটক তৈরি করে পুনরায় মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা আবেদনে লেখেন, নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের নামে কুৎসা রটিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পিবিআইয়ের পরামর্শে নুসরাতের ভাই নোমান ফেনীতে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই বছরের ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এসএসএইচ