ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে শঙ্কা। মধ্যরাত থে‌কে উপকূলজু‌ড়ে শুরু হ‌য়ে‌ছে বৃ‌ষ্টি। মা‌ঝেম‌ধ্যে বয়ে যা‌চ্ছে দমকা হাওয়া। এর প্রভাবে খুলনায় রোববার মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। খুলনায় দিবাগত রাত ১২টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এ‌দি‌কে প্রাকৃ‌তিক দুর্যোগে বার বার বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা উপ‌জেলার হ‌রিণ‌খোলা ও গা‌তিরঘে‌রী নামক স্থা‌নে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুপুরের জোয়ারের আগে কাজ করতে না পারলে ফসল, ঘরবাড়ি সব নোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয়রা।

কয়রা পশ্চিম দেয়াড়া একতা সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো.তরিকুল ইসলাম বলেন, উপকূলজুড়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। দুটি স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ নেই। আশ্রয়কেন্দ্রে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থায় লাইট জ্বললেও মোবাইল চার্জিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে আবহাওয়া বার্তা পেতে সমস্যা হচ্ছে।

আরও পড়ুন : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : প্রস্তুতি ও মোকাবিলা জরুরি 

খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার হ‌রিণ‌খোলা ও গা‌তির‌ঘেরী‌র বাঁ‌ধে ভাঙন দেখা দি‌য়ে‌ছে। স্থানীয়‌দের নি‌য়ে মেরাম‌তের প্রস্তু‌তি‌ চল‌ছে। এছাড়া কয়রার হোগলা, দোশহালিয়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালী, গাববুনিয়া, আংটিহারা, ৪ নং কয়রা সুতির গেট ও মঠবাড়ির পবনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে নিজ নিজ এলাকার বাঁধের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়ে‌ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অবস্থান মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল। মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, রোববার মধ্যরাত থেকে ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এ দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত আরও ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মধ্যরাত থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

কয়রা আবহাওয়া অ‌ফি‌সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বান্না জানান, ঘূ‌র্ণিঝ‌ড় মঙ্গলবার ভো‌রের দি‌কে উপকূ‌লে আঘাত হান‌তে পা‌রে। সোমবার ভোর থে‌কে কয়রায় ৩০-৩৫ কি‌লো‌মিটার বে‌গে বাতাস প্রবা‌হিত হ‌চ্ছে। মধ্যরাত থে‌কে বৃ‌ষ্টিপাত শুরু হ‌য়ে‌ছে। তি‌নি আরও ব‌লেন, বিদ্যুৎ না থাকায় রি‌পোর্ট প্রদা‌নে সমস্যা হ‌চ্ছে।

আরও পড়ুন : জলবায়ু পরিবর্তন : তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ১৩ শতাংশ ভূমি

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে জেলায় ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দাকোপে ১১৮, বটিয়াঘাটায় ২৭, কয়রায় ১১৭, ডুমুরিয়ায় ২৫, পাইকগাছায় ৩২, তেরখাদায় ২২, রূপসায় ৩৯, ফুলতলায় ১৩ ও দিঘলিয়ায় ১৬টি।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, গত মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। পাশাপাশি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাইকগাছা উপজেলার কোথাও বাঁধ ভাঙার সংবাদ পাইনি। তবে দুপুরের জোয়ারের পর সার্বিক পরিস্থিতি বোঝা যাবে।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আগতদের জন্য শুকনো খাবার, চাল ও টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি।

মোহাম্মদ মিলন/এসপি