রংপুরে রাতেও সমাবেশের মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মীরা, হয়রানির অভিযোগ
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর এবার রংপুরে হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে পূর্বনির্ধারিত এ গণসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই আজ শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে মটর মালিক সমিতির ডাকা ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে নেতা-কর্মীরা রংপুরে আসছেন। পথে পথে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় সমাবেশস্থল কালেক্টর মাঠে শত শত নেতা-কর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। শীত উপেক্ষা করে তারা মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেন। তাদের বেশিরভাগই সমাবেশ সফল করতে মোটরসাইকেল, কার, পিকআপ ও বাসযোগে বিভিন্ন জায়গা থেকে রংপুরে আসছেন।
বিজ্ঞাপন
কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে কথা হয় ঠাকুরগাঁও থেকে আসা সরকার মো. নুরুজ্জামান নুরের সঙ্গে। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। তিনি জানান, তার জেলা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ২০ হাজার নেতা-কর্মী গণসমাবেশ সফল করতে রংপুরে আসবেন। ইতোমধ্যে ৫ হাজার নেতা-কর্মী রংপুরে এসেছেন। বাকিরা বিভিন্ন উপায়ে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছবেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণার পর ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলা থেকে মাইক্রোবাস, পিকআপ ও মোটরসাইকেলে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে নেতা-কর্মীরা ক্রমান্বয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। যারা রাতের মধ্যে এসে পৌঁছেছে, তাদের কেউ বাজারে, অলিগলি ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতেসহ অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন। অনেকে আবার সমাবেশস্থলেই রাত্রিযাপন করছেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা আরও বলেন, রাস্তায় আসার পথে দিনাজপুরের দশমাইল, সৈয়দপুরের বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। গণসমাবেশের উদ্দেশে রংপুরের দিকে আসা নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামু অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন তল্লাশি চালাচ্ছেন। তাই হোটেলে অনেক নেতা-কর্মীরা উঠতে নিরাপদ মনে করছে না। নিরাপদ স্থান হিসেবে রাত থেকে গণসমাবেশের শেষদিন পর্যন্ত বেশিরভাগ নেতা-কর্মী মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে থাকতে দেখা গেছে।। তারা সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণসহ অন্যান্য প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর নেন। সভামঞ্চ প্রস্তুতের প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব বলেন, আমাদের আন্দোলন সমাবেশ ঠেকাতে এমন কোনো পদক্ষেপ নেই যা সরকার গ্রহণ করেনি। তবে সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না। মানুষ একটা গোমট আবহাওয়ার মধ্যে আছে। এ আবহাওয়াকে ভেঙে ফেলার জন্য মানুষ আজ বিএনপির যেকোনো সমাবেশে দলে দলে যোগ দিচ্ছে। রংপুরের সমাবেশেও লোকজন যোগ দেবে। ধর্মঘটের নামে গণপরিবহন বন্ধ করে গণসমাবেশে লোকজনের আসা ঠেকাতে পারবে না সরকার।
এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, হোটেলে অবস্থান নেওয়া লোকজনের খোঁজ নেওয়ার বিষয়টি পুলিশের নিয়মিত কাজ। এটি আমরা সংগ্রহ করি এবং হোটেল মালিকগণ আমাদের জানান। আমরা কাউকে হয়রানি করছি না। অভিযোগ করতেই পারে, আমরা তো কাউকে ধরে নিয়ে আসিনি।
অন্যদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার নুরে আলম মিনা বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছি। সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা না ঘটে, সেজন্য কয়েক দফায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএ