বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সাত সাংবাদিকসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বরগুনা সদর হাসপাতাল ও পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

রোববার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বরগুনা ১ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, বরগুনা পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ, আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের সামনেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, দীর্ঘ ৯ বছর পর রোববার বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় পৌরসভা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা ১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু। 

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ কাদের মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আক্তার ও সদস্য গোলাম রব্বানী চিনু।

নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন শুরু হয়। এরপর দুপুরের দিকে হাঠাৎ করেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিএম দেলোয়ারের ছেলে এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম মুসার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে জিএম মুসাসহ দুই গ্রুপের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। এসময় ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করতে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাদল খানের নেতৃত্বে ৭ সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়। 

পরে জিএম মুসাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাংবাদিকদের বরগুনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যান্য আহতরা আমতলী ও পটুয়াখালীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

আমতলী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম মুসা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের নির্দেশে আমাদের ওপরে হামলা হয়েছে। মতিউর রহমান তার আধিপত্য দেখাতে গিয়ে ক্যাডার বাদল খানের মাধ্যমে এ হামলা চালান। এতে আমার ৪০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক প্রত্যাক্ষদর্শী একজন সাংবাদিক বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারির ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মঞ্চে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাহাঙ্গীর কবিরসহ জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। সবাই চুপ ছিলেন। শেষে পুলিশ এসে সাংবাদিকদের রক্ষা করেছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বাদল খান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে ফোন করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি। 

বিষয়ে বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক ইমরান হোসেন টিটু বলেন, আহত সাংবাদিকরা লজ্জায় তাদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। তবে আজ রাতেই আহত সাংবাদিকদের সঙ্গে মিটিং করবে বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়ন। সেখানে হামলাকারীদের নামে মামলা করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আমতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে লিপ্ত নেতাকর্মীদের সম্মেলনের স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহতরা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে এ ঘটনা এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খান নাঈম/এমএএস