বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযানের নামে হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। পুরোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের নামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। 

বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

এ গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শামা ওবায়েদ।

সংবাদ সম্মেলনে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আগামী শনিবার (১২ নভেম্বর) ফরিদপুরে বিএনপির উদ্যোগে ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বেলা ১১টায় কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে এ সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশে ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা ছাড়াও কুষ্টিয়া, যশোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ থেকেও লোকজন সমবেত হবে। সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ফরিদপুরের গণসমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। এই এলাকার মানুষ বুঝিয়ে দেবে আমরা নদী ভাঙ্গা ও প্রাকৃতিক দৈব্য-দুর্বিপাক সহ্য করা মানুষ। এই এলাকার মানুষ কাউকে পরোয়া করে না।

তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। আমরা অন্তত এক মাস আগে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দেয়নি। বাধা দেওয়া বা বাধাগ্রস্ত করার এমন কোনো পথ ছিল না যা আগের সমাবেশগুলোতে হয়নি, ফরিদপুর তার ব্যাতিক্রম হচ্ছে না। আমাদের বলা হয়েছে সরকারের একটি সহযোগী সংগঠন মাঠ চেয়েছে। সরকারের এতো কৌশল, যে কৌশল তারা অন্য বিভাগীয় সমাবেশের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছে। একই কায়দায় ডাকা হয়েছে বাস ও মিসিবাসের ধর্মঘট। শ্রমিক ও মালিকরা একই কৌশলে কাজ করছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, নেই মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সাংবাদিকদের বিভিন্ন আইন দিয়ে বাধা হচ্ছে অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। দেশে অর্থনীতির সংকট চরমে। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হবে কিনা তা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এতো দিন বলা হতো মেগা প্রকল্প, মধ্যম আয়ের দেশের কথা। আজ বলা হচ্ছে দুর্ভিক্ষের কথা।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি নিজেদের জন্য এ গণসমাবেশ করছে না। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করেতে এ আন্দোলন করছে। তাই এটা বিএনপির গণসমাবেশ নয়, গণমানুষের গণ দাবি আদায়ের সমাবেশ।

এই বিএনপি নেতা বলেন, গণসমাবেশের আগে অতিউৎসাহী পুলিশরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তারা পুরোনো ওয়ারেন্ট তামিল করার নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছেন। নগরকান্দায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রাতে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে পুলিশ নারীদের সঙ্গে দুর্ব্য্যবহার করেছে।

তিনি বলেন, কোনো কিছু দিয়ে এ সামাবেশ বানচাল করা যাবে না। বানচাল করার চেষ্টা করা হলে ফরিদপুরের আনাকে কানাচে সমাবেশ হবে। উপজেলা, ইউনিয়নে সমাবেশ হবে। এই ভয় দেখিয়ে  কোনো কাজ হবে না। গ্রেপ্তার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দেবে। 

শামা ওবায়েদ বলেন, সারাদেশে আজ গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে অভিযানের নামে হামলা করছে, দুর্ব্যবহার করছে। তবে জনগণ আর বসে থাকবে না। বিএনপির নেতৃত্বে তারা সমবেত হয়ে দাবি আদায় করে নেবে। 

তিনি বলেন, গত রাতে নগরকান্দায় আটজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফরিদপুরে অন্তত ছয়জন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে হামলা করেছে পুলিশ। বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ছোট ভাইকে আটক করেছে। আরও নেতাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ, বিএনপির দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিক, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসির ও ইয়াসমিন আরা হক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি  মাহবুবুল হাসান ভূইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, ওয়ারেন্ট রয়েছে এবং আইন শৃঙ্খলা অবনতি করার রেকর্ড আছে, পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে তাদের বাড়িতে গেছে, তল্লাশি করেছে। এ সময় কোনো নারীর সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা হয়নি। যে অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে আনা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।

জহির হোসেন/আরএআর