সবুজ অরণ্য আর নদী যেন এক নান্দনিক সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের। নীল পানির নৈসর্গিক দৃশ্য আর তটরেখায় আছড়ে পড়ছে ছোট-বড় ঢেউ। পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং তিন কিলোমিটার প্রস্থের সৈকতের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।

নেওয়া যায় নৌকা ভ্রমণের অসাধারণ অভিজ্ঞতা। বাড়তি আনন্দ দেবে অরণ্যের ছায়ায় ঘুরে বেড়ানো। একটু অবসর কাটানোর জন্য এক দিনের ভ্রমণে সেরা এক গন্তব্য হলো ‘মুছাপুর ক্লোজার’। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবেও পরিচিত। প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থী এই ক্লোজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে বঙ্গোপসাগরের কুলঘেঁষে ফেনী নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই ক্লোজার। প্রথম দেখাতে মনে হবে সৈকত। কিছুক্ষণ পরে ভুল ভাঙবে। খুঁজে পাবেন নদীপাড়ে সাগরের আবহ। দেখতে সমুদ্র সৈকতের মতো এই নদীপাড়। এ কারণে একে ‘মিনি কক্সবাজারও’ বলা হয়। আবার অনেকে মুছাপুর সমুদ্র সৈকত হিসেবেও চেনেন স্থানটি। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই ক্লোজারটি।

জানা যায়, মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় চরের মধ্যে দক্ষিণ মুছাপুর মৌজায় ৮২১.৫৭ একর, চরবালুয়া (দিয়ারা) মৌজায় ১৮৬১.১০ একর ও চরবালুয়া মৌজায় ৬০০.১৫ একর সর্বমোট ৩২৮২.৮২ একর বন বিভাগের জমিজুড়ে মনোরম বনাঞ্চল আছে। এর মধ্যে মুছাপুর ফরেস্ট বাগানটি অন্যতম। এই ফরেস্ট বাগানে আছে ঝাউ, কেওড়া, পিটালি, খেজুর, লতাবন, গেওয়া, শনবলই, বাবুলনাটাই, আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ।

বনের সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলে পাবেন শীতল ছায়া। কোথাও কোথাও আবার পাবেন বিশাল খোলা জায়গা। তার পাশেই দেখা যাবে দিগন্তজোড়া সৈকতের অপার মাধুর্য। এখানে চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকমের বনজ গাছ। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল, বিশাল সমুদ্র সৈকত। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্যের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। রয়েছে ট্রলারে কিংবা স্পিডবোটে করে চরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ। এখানে রয়েছে ঘুঘুসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির পাখির অভয়স্থল।

মুছাপুর ক্লোজারে ঘুরতে আসা ইশিতা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের ৯ জনকে নিয়ে আমরা ঘুরতে এসেছি। এখানে খুব আনন্দ করছি। আমাদের খুব ভালো লেগেছে। 

রাজু খান নামে এক পর্যটক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুছাপুর ক্লোজারকে আমরা মিনি কক্সবাজার বলি। এটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালীতে এমন সুন্দর জায়গা আর কোথাও নেই। এখানে শুক্রবার ও শনিবার প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। মুছাপুর আসার সড়কটি দ্রুত মেরামত করা দরকার। 

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা থেকে ৮ সদস্যের পরিবার নিয়ে মুছাপুর এসেছেন মো. রফিক উদ্দিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৮ সদস্যের পরিবার নিয়ে আমরা সোনাগাজী থেকে মুছাপুর ক্লোজারে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের খুব ভালো লেগেছে। আবহাওয়া, পরিবেশ অনেক ভালো। তবে কিছু কিছু জিনিসের অভাব আছে। এখানে পাবলিক টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। এগুলো হলে লোক সমাগম ও সৌন্দর্য আরও বাড়বে।

মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই এলাকাটি নদীভাঙন কবলিত ছিল। এখানে ক্রস ডেম ও ব্লক ফেলে ভাঙন রোধ করে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা তৈরি করেছেন ওবায়দুল কাদের। এজন্য এখানে হাজার হাজার মানুষ বিনোদনের জন্য ঘুরতে আসেন। কক্সবাজারে যা নেই এখানে তা রয়েছে। এখানে একসঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। 

পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় ভাগ্য বদলে গেছে অনেকের। মুছাপুর ক্লোজারে দোকানপাট বসিয়ে চালাচ্ছেন নিজেদের সংসার। সৈয়দ রফিকুল ইসলাম রাকিব নামে এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী-ফেনীর পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন। মুছাপুর ক্লোজার হওয়ায় আমাদের জীবনমানের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

আব্দুল গণি নামে আরেক দোকানদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা যেহেতু মিনি কক্সবাজার, তাই কক্সবাজারে যা পাওয়া যায় তার সবকিছু আমার দোকানে রেখেছি। ঝিনুক-পাথরের মালা, বার্মিজ আচার, বার্মিজ বাদাম, বার্মিজ চকলেটসহ সব আইটেম আমরা রেখেছি। পর্যটকরা যেন মন ভরে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী অনেক প্রাচীন জনপদ। নোয়াখালীকে ঘিরে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটনের জন্য নোয়াখালীকে তুলে ধরতে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প কাজ করছেন। মুছাপুর ক্লোজার ব্যাপক সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থান। ওবায়দুল কাদের এখানে ইকো পার্ক করার জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। সেটি নিয়েও কাজ চলছে।  

হাসিব আল আমিন/এসপি