গ্রেপ্তারকৃত এসআই মেহেদী হাসান

একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়াচ্ছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। পর্যটক আটকে ঘুষ নিয়ে দুই পুলিশ সদস্য ক্লোজড এবং তদন্তে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে এসআই গ্রেপ্তারের পর আরও এক এসআইকে গ্রেপ্তার করেছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

স্কুলছাত্রীর ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপনের প্রস্তাব এবং ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায়ের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর বাকলার মোড়ের বাসা থেকে মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৮ নভেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ওই কিশোরীর নাম্বারে কল করে এসআই মেহেদী হাসান। তবে তিনি তার পরিচয় গোপন রেখে জানায়, কিশোরীর একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও তার কাছে রয়েছে। এরপর কিশোরীর হোয়াটস্অ্যাপে সেই ছবি ও ভিডিও পাঠান। এসআই মেহেদী স্কুলছাত্রীর হোয়াটস্অ্যাপ নাম্বারে ফোন করে ও ম্যাসেজ দিয়ে আরও ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করে পাঠাতে বলেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনি কিশোরীর হেয়াটস্অ্যাপে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাঠাতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু কিশোরী এতে রাজি না হলে তার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের ভিডিও পাঠিয়ে দেবে বলে ভয়ভীতি দেখান। পাশাপাশি কিশোরীকে কু-প্রস্তাব দেন। 

এই ধারাবাহিকতায় কিশোরীর আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ১৫ নভেম্বর ১ হাজার টাকাও নেন এসআই মেহেদী। বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার পুলিশকে জানালে তদন্তের পর অভিযান চালিয়ে মেহেদীকে আটক করা হয়।

বরিশাল মেট্রোপলিটন থানা পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমাদের কাছে একটি অভিযোগ আসে। যেখানে অভিভাবক দাবি করেন তাদের মেয়ের মোবাইলে কেউ একজন অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে টাকা চাচ্ছে। এ ঘটনায় আমরা তদন্তে নামি। একপর্যায়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি যখন বিকাশ নাম্বারে টাকা চান তখন সেখানে টাকা পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার অভিযান চালাই। অভিযানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে আটক করার পর দেখা যায় সে কয়েকদিন আগে অন্য একটি ঘটনায় সাসপেন্ড হওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই)। তার মোবাইল ফোন যাচাই করে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে এ বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সাথে নিয়মানুযায়ী বিভাগীয় মামলা দায়েরেরও প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, অপরাধে জড়িয়ে কেউই ছাড় পাবে না। কে কোনো পেশার সেটি দেখার বিষয় নয়। আইনের চোখে অপরাধীর পরিচয় সে অপরাধী। 

মেট্রো পুলিশের তিন মাসে পরপর তিনটি অপরাধে জড়ানোর খবরে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বরিশালের বিশিষ্টজনরা বলছেন, তদারকির অভাবে ধারাবাহিকভাবে এমন ঘটনা ঘটছে। পরপর তিনটি ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলার অবকাশ নেই বলে মনে করছেন তারা। 

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যদের অপরাধে জড়ানোর যে খবর আসছে সেটি ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমি এখানকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তাদের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণ আরও বাড়ানো উচিত। নয়তো পুলিশের এমন অপরাধ মেনে নেওয়া যায় না। সেই সাথে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক যাতে আর কেউ এমন অপকর্ম না করতে পারেন। 

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বর্তমানে যেসব পুলিশ সদস্য নিয়োগ পাচ্ছেন তারা পেশাদারিত্বের চেয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং অর্থের পেশীশক্তি ব্যবহার করেন বেশি। বরিশালে যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে মারাত্মকভাবে পেশাদারিত্বের অভাব দেখা দিয়েছে পুলিশের মধ্যে। এই বাহিনীকে আরো সুশৃঙ্খল করতে উর্ধ্বতনদের আরও কঠোর হতে হবে। 

প্রসঙ্গত, গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া এসআই মেহেদী হাসান ও আরেক এসআই  ইব্রাহিম খলিল দুজনেই কোতয়ালী মডেল থানায় দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যটক আটকে ঘুষ নেওয়ার ঘটনায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন। এছাড়া কোতয়ালী মডেল থানার একটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল বাশার অভিযোগ দিতে আসা বিধবাকে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করায় ১৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়েছেন।  

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে