সাগরে ইলিশ সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন বরগুনার জেলে ও ট্রলার মালিকরা। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িতে ফিরতে পারছেন না জেলেরা। আর ঋণ পরিশোধের জন্য ট্রলার বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না মালিকরা। এ অবস্থায় মূলধন সংকটে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছে না বরগুনার অধিকাংশ মাছ ধরার ট্রলার।

জানা যায়, প্রায় দেড়-দুই লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে ৮-১০ দিনের জন্য সাগরে যায় মাছ ধরার ট্রলারগুলো। কিন্তু সাগরে ইলিশ না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জেলে ও ট্রলার মালিকরা। ইলিশ না পাওয়ায় আয় হচ্ছে না তাদের। তাই অর্থ সংকটে সাগরে ফের ট্রলার পাঠাতে পারছেন না মালিকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাগরে ইলিশ শিকার শেষে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসেছেন এফ বি মায়ের দোয়া-১ নামে মাছ ধরার ট্রলারের ১৬ জেলে। সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় চোখে-মুখে হতাশার ছাপ তাদের। শুধু মায়ের দোয়া ট্রলারের জেলেরাই নয়, একই অবস্থা বরগুনার প্রায় সব জেলের। সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় দিন দিন ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িতেও যেতে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলেরা।

আফজাল, খোকন, রশিদ মিয়াসহ কয়েকজন জেলে বলেন, সাগরে ইলিশ নেই। দুই-আড়াই লাখ টাকা খরচ করে সাগরে যাই, কিন্তু আমাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছি না। পাওনাদারদের ভয়ে বাড়িতেও যেতে পারছি না। সত্যি কথা বলতে অসহায় আমরা। 

সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় দিন দিন ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে ট্রলার মালিকদেরও। তাই মূলধন সংকটে অধিকাংশ ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে না। ঋণের দায়ে ট্রলার বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না ট্রলার মালিকরা।

লিটন ফরাজি, হাসান, বেলাল হোসেনসহ কয়েকজন ট্রলার মালিক বলেন, সাগরে ইলিশ নেই। ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারছি না। জাল ট্রলার বিক্রি করতে চাই। তবুও ক্রেতা পাচ্ছি না। এই কারবারে এখন আর কেউ আসতে চায় না। শুধু লস আর লস।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্র আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে ইলিশ নেই। টাকার অভাবে সাগরে ট্রলার পাঠাতে পারছেন না অনেক মালিক। অনেকে ট্রলার বিক্রি করতেও পারছেন না। এখন আমাদের যদি বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারব।

প্রসঙ্গত, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১ সালের ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞার পর ২৯ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত এ অবতরণকেন্দ্রে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১১৫ মেট্রিক টন। আর একই সময়ে এ বছর ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭৭ মেট্রিক টন। 

এসপি