লক্ষ্মীপুরে বাড়ির চলাচলের রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ৬ বছর ধরে এক বাস হেলপারের পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগী বাস হেলপার শহিদ উল্যা বাবুল সাংবাদিকদের ঘটনাটি জানিয়েছেন। সরেজমিনের ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতাও পাওয়া যায়।

এর আগে ২০ নভেম্বর শহিদ এ ঘটনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেনের কাছে ৮ জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেন। শহিদ সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম করইতলা গ্রামের গোচ্ছার বাড়ির মৃত মোজাফ্ফর ইসলামের ছেলে। একটি প্রতিবন্ধী মেয়েসহ তার ৫ সন্তান রয়েছে। ৬ বছর ধরেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

অভিযুক্তরা হলেন- খলিলুর রহমান, তার ভাই ছাবিদ উল্যা বেপারী, সফিক উল্যা, ভাতিজা আবদুর রব, ছকু মিয়া, মোহাম্মদ উল্যা, নুরনবী ও নুরুল ইসলাম। খলিল ও তার ছেলে মিজানুর রহমান অভিযোগকারীর ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন। অভিযুক্তরা সুপারি ব্যবসায়ী হাসান আলীর পরিবারকেও অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহিদের বাড়ির পূর্ব পাশে কাঁটাতারের বেড়া গেছে। একই সঙ্গে টিনের বেড়াও রয়েছে। এর একটি অংশ দিয়ে ৬ বছর আগেও তারা চলাচল করতো তারা। কিন্তু সেখানে কিছু গাছপালা লাগিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয় খলিল ও তার ছেলেরা। এরপরও বেড়ার একটি টিন সরিয়ে তারা চলাফেরা করছিল। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও চলাচলের জন্য রাস্তা পাচ্ছিল না তারা। সবশেষ ১ বছর আগে টিনের বেড়া খুলে অভিযুক্তরা সেখানে কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়ে দেয়। তখন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ এলেও কোনো সুরাহা হয়নি। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

শহিদ উল্যা বাবুল বলেন, বাড়ির ওপরের রাস্তা দিয়ে সবাই চলাচল করতাম। কিন্তু ৬ বছর আগে খলিলুর রহমান ও তার ছেলেরা টিনের বেড়া দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়। প্রায় এক বছর আগে তারা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেয়। এখন আমরা অন্যের বাড়ির ওপর দিয়ে চলাচল করি। আমাকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যেই তারা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

সুপারি ব্যবসায়ী বৃদ্ধ হাসান আলী বলেন, পূর্ব পুরুষের ভিটাতেই আমি বসবাস করছি। বাড়ির পূর্ব দিকে অন্যের জমির ওপর দিয়ে আমরা চলাচল করতাম। পরে বাড়িঘর নির্মাণ হওয়ায় সেখান দিয়ে চলাচল করতে পারছি না। ছকু মিয়া আমার খালাতো ভাই। তার বাড়ির উঠান পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে। সেখান দিয়েই পরবর্তীতে আমরা চলাচল করতাম। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তারা আমাদের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমরা অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি। অন্যের বাড়ির ভেতর দিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়।

খলিলুর রহমান বলেন, কখনো সেখানে রাস্তা ছিল না। হাসান আলী ও শহিদরা মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। শহিদের বাবা মোজাফফর আমাদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। শহিদও বিক্রি করেছেন। তার বসতঘরের ভেতর আমাদের জমি রয়েছে।

খলিলুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, বাড়ির ওপর আমার একার জমি নয়। অন্যরা শহিদকে রাস্তা দিতে চাইলে আমি দেব। কিন্তু অন্যরা তাকে রাস্তা দিতে চাচ্ছে না। হাসান আলীর সঙ্গে আমার চাচাতো ভাই ছকু মিয়াদের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। রাস্তার জমির পরিবর্তে অন্য স্থানের জমি দিতে বললেও হাসানরা রাজি হননি। এজন্য ঘটনাটি মীমাংসা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে কথা বলতে দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম কামাল উদ্দিনের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, রাস্তা বের করে দেওয়ার জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু শহিদের প্রতিপক্ষরা প্রভাবশালী, এজন্য তারা তাকে রাস্তা দিচ্ছে না। উল্টো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে। 

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস