সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে।পুরানো সেতুটি ভেঙে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। নতুন সেতুর নির্মাণের পর দুই পাড়ের ৪ হাজার মানুষের ভোগান্তি শেষ হবার কথা থাকলেও বাস্তবতা দেখা গেছে ভিন্ন। কাজ শেষ হলেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় নিজ উদ্যোগে কাঠের সিঁড়ি বানিয়ে সেতুটি ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণের।

সাধারণ মানুষ বলছে এতো টাকার সেতু তৈরি করে যদি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় সেখানে সেতু না করাটাই ভালো ছিল। জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন এতো টাকা খরচ করে এখানো সেতু নির্মানের কোন প্রয়োজন ছিল না। তবে সংশ্লিষ্ট এলজিউডি বলছে জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান হলেই সেতুর এ্যাপ্রোচ তৈরি হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠী ইউনিয়নের তারাবুনিয়া খালের উপর নির্মিত সংযোগ সেতুটি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। পুরানো সেতু কয়েকদিন আগে ভেঙে গেলে তখন সাধারণ মানুষের পারাপারের একমাত্র পথ ছিল নৌকা। পরে নির্মিত নতুন সেতুটি বর্তমানে স্থানীয় সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসছে না। জায়গা না পাওয়ায় এখনো নবনির্মিত সেতুর দুই পাশে তৈরি হয়নি সংযোগ সড়ক। বাধ্য হয়েই কয়েকদিন আগে নিজ উদ্যোগে সেতুতে উঠতে সেখানে কাঠের সিঁড়ি তৈরি করেছেন সাধারণ জনগণ। তবে এতো টাকা খরচ করে সেতু তৈরি করে সেখানে কাঠের সিঁড়ি বানিয়ে কেন উঠতে হবে সে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথকাঠী-বৈঠাকাটা জিসি সড়কে আই.বি.আর.বি প্রকল্পের আওতায় ৪৬ মিটার লম্বা আরসিসি গার্ডার ব্রিজ যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করে মেসার্স এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ার্স নামের ২টি প্রতিষ্ঠান। ৫ কোটি ৬২ লাখ ২২ হাজার ৭০ টাকা প্রক্কলিত ব্যয়ে ও ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬ টাকার চুক্তি মূল্যে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। যার কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু দুই পাশের সংযোগ সড়ক জমি অধিগ্রহণ ঝামেলায় এখনো সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।  

স্থানীয় বাকি বিল্লাহ বলেন, সেতু সরকার দিয়েছে কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে সেতুর সংযোগ সড়ক আটকে আছে। এতো টাকা খরচ করে এমন অব্যবস্থাপনার কারণে সেতুর সংযোগ সড়ক আটকে থাকা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার লোক পারাপার করে।

স্থানীয় নুরুজ্জামান হাওলাদার বলেন, ব্রিজ তো একটা বানাইয়া রাখছে। কিন্তু সেতো আমাদের কোনো কাজে লাগছে না। আমরা আগে নদী পার হতাম নৌকায় এখন ব্রিজ হয়েছে কিন্তু তা আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। এখন বলে যাদের জায়গায় ব্রিজের সড়ক হবে তারা নাকি জায়গা দেবে না। এটা আগে খেয়াল করতে হতো।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, তারাবুনিয়া খালের ওপর আমাদের এই সেতুর কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। চেয়ারম্যান ঠিকাদারদের বলেছে এ্যাপ্রেচের কাজ দ্রুত করেন। যা সহযোগিতা লাগবে আমি করব। তারা আজ-কাল বলে ঘুরাচ্ছে। অনেকে এসে দেখে গেছে। প্রথমে জায়গা নিয়ে সমস্যা না থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় কিছু লোকের উসকানিতে সাধারণ মানুষ জায়গা নিয়ে ঝামেলা শুরু করে। স্থানীয় কিছু লোক চায় সরকারি উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হোক তাই এই ব্রিজে আমাদের কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়াম্যান রুহুল আমিন অসীম বলেন, এক বছর আগে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু লোক সেতুর দুই পাশের এ্যাপ্রোচ সড়কের জায়গার দাম হিসেবে টাকা দাবি করছে। আমি তাদের বলেছি এলজিইডি টাকা দেয় না। কিছু লোক তাদের বুঝিয়েছে টাকা পাওয়া যাবে। তাই এ্যাপ্রোচ সড়ক আটকে আছে। কাঠের সিঁড়ি বর্তমানে সেতুতে ওঠার জন্য একটি মরণ ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এটি দ্রুত খুলে দিয়ে সমাধান করা দরকার।

নেচারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, সেতু তৈরি শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে। জায়গা মাপার পরে এ্যাপ্রোচ সড়ক করতে কেউ আসে নাই। তাদের কোন খোঁজ-খবর নাই। এখানকার শান্তিপ্রিয় জনগণ চায় ব্রিজ হোক। তবে জনগণ জায়গার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ চাওয়ায় তারা এ্যাপ্রোচ করতে আর আসে নাই।

নেছারাবাদ উপজেলা প্রকৌশলী তৌফিক আজিজ বলেন, এ্যাপ্রোচের ব্যপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চলছে। কীভাবে এটা করা যায় সেটা দেখা হচ্ছে। এখানে আমি আসার আগে এই সেতুর বরাদ্দ হয়েছে। চেষ্টা চলছে, যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয়দের নিয়ে বসে এ্যাপ্রোচের ব্যপারে সমাধান করা হবে।

আবীর হাসান/আরকে