শিক্ষার কোনো বয়স নেই। বিষয়টি আবারও প্রমাণ করলেন ৬৭ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদ। তিনি এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ২.৯৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আবুল কালাম আজাদের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া গ্রামে। অভাবের কারণে তিনি পড়ালেখা করতে পারেননি। তবে তিন ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। বড় ছেলেকে শিক্ষক, মেঝ ছেলেকে কামিল পাস ও ছোট ছেলেকে বানিয়েছেন প্রকৌশলী। 

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯৭৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ায় অভাবের কারণে পড়তে পারিনি। সে সময় পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল। তাই ঢাকায় চলে যাই। ঢাকাতে গিয়ে পড়ালেখা করতে চেয়েছি। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তারপর ঢাকা থেকে সৌদি আরব চলে যাই। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর থাকি। বাড়ি ফিরে সাংসারিক কাজের ফাঁকে শুরু করি লেখালেখি। ইতোমধ্যে অসংখ্য কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান লিখেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি কবিতা লিখেছি। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাঁচটি কবিতা লিখেছি। আমি চাই আমার লেখা কবিতা যেন প্রধানমন্ত্রী হাতে পৌঁছায়।

নতুন করে পড়ালেখা করে পাস করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কালাম বলেন, প্রথমে সবাই হাসাহাসি করলেও এখন আমি পাস করাই তারা খুশি। তারা আমার পরীক্ষার ফলাফলের খোঁজ-খবর নিয়েছে। মহানবী (সা.) শিক্ষা গ্রহণের জন্য সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও যেতে বলেছিলেন। তাই আমি আমার ইচ্ছাটা শেষ বয়সে হলেও পূরণ করতে পেরেছি।

কালামের মেঝ ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, বাবা আমাদের লেখাপড়া ও সংসার চালাতে অনেক কষ্ট করেছেন। তার ইচ্ছে থাকার পরও পড়াশোনা করতে পারেননি। তিনি শেষ বয়সে এসে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন। এতেই আমরা খুশি।

প্রতিবেশী তরুণ রুবেল মিয়া বলেন, এখনকার পোলাপান বয়স থাকতেই পড়ালেখা করতে চায় না। কামাল দাদা এই বৃদ্ধ বয়সে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেন। এটা নিয়ে এলকায় আলোচনা চলছে।

রাকিবুল আওয়াল পাপুল বলেন, চাচা শেষ বয়সে এসে পরীক্ষা দিয়ে পাস করছে। আমরা মাঝে-মধ্যে তার কাছে গিয়ে কবিতা শুনি। তার নিজের লেখা অনেক কবিতা আছে, কবিতা শুনতে ভালোই লাগে।

খড়িয়াকাজীরচরের ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবুল কালাম আজাদ এই বয়সে এসে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। তিনি সবার তুলনায় ভালো রেজাল্ট করেছেন। তিনি আমাদের সবার কাছে কবি কালাম নামে পরিচিত।

এসপি