সড়কে প্রায়ই ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। দুর্ঘটনা থেকে মোটরসাইকেল চালকদের রক্ষা করতে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে নীলফামারীতে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ কর্মসূচি শুরু করেছে পুলিশ। পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। তেল পাম্পের মালিকরা পুলিশের এই উদ্যোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নীলফামারীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে চালু হয়েছে এ নিয়ম। জেলা শহরসহ উপজেলা শহরগুলোতে জনসচেতনতা বাড়াতে চলছে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং। এছাড়াও ফিলিং স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখেও কার্যক্রমটির তদারকি করছে পুলিশ। ফলে হেলমেট ছাড়া পেট্রোল বিক্রির সুযোগ নেই ফিলিং স্টেশনগুলোর।

জেলার কয়েকটি পেট্রোল পাম্পে ঘুরে দেখা গেছে, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পেট্রোল পাম্পগুলোতে বিভিন্ন সাইনবোর্ড ও ব্যানার  প্রদর্শন করা হয়েছে। কয়েকটি পেট্রোল পাম্পে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পেট্রোল পাম্পগুলোতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করা, দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল না চালানো ও মোটরসাইকেল চালানোর সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্যে আরোহীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মোটরসাইকেল চালকরা জানান, চালক ও আরোহীদের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার জরুরি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হেলমেট ছাড়া চলাচল করে অনেকেই হেলমেট ব্যবহারে বিরক্তি বোধ করছেন। চলমান ট্রাফিক পুলিশের অভিযান ও ফিলিং স্টেশনের কঠোরতার কারণেই এখন সবাই হেলমেট ব্যবহার করবেন।

জেলা শহরের বাদিয়ার মোড় রাজা ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল নিতে এসেছিলেন পরিমল রায়। তবে হেলমেট না থাকায় পেট্রোল দেয়নি পাম্প কর্তৃপক্ষ। পরিমল রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়মটি এভাবে চলমান থাকলে অবশ্যই আমরা সচেতন হবো। আজ আমি সচেতন হয়েছি কাল আরেকজন এভাবে ঠিক হয়ে যাবে। দুর্ঘটনাও কমবে। 

ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। দোকান থেকে বাসায় যাব তেল নিতে আসলাম তেল দেয়নি। পরে দোকান থেকে হেলমেট এনে তেল নিলাম। আসলে এটা আমাদের জন্য ভালো। আমাদের মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট পড়া উচিৎ। আমাদের ভালোর জন্যই পুলিশ এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

হক ফিলিং স্টেশনের মালিক সামসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের মালিকদের নিয়ে পুলিশ সুপার মিটিং করেছেন। উদ্যোগটি অনেক ভালো। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশ প্রশাসনের পাশে আছি। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব। আমরা হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের কাছে পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি করছি না।

মুক্তা ফিলিং স্টেশনের মালিক আলম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ।  সকাল থেকে পুলিশের সদস্যরা পর্যবেক্ষণ করছেন। কেউ হেলমেট না আনলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

ডোমার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার সেম্বু নাথ রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, নীলফামারীতে পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা তা পালন করছি। পাম্পে তেল নিতে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালক এখন কমই আসছেন। 

ডোমার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ উন-নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ঘোষনা দিয়েছিলেন ১ ডিসেম্বর থেকে পুরো নীলফামারী জেলায় ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রম চালু হবে। স্যারের সেই নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ডোমার থানা পুলিশ কয়েকদিন থেকে অনলাইনের মাধ্যমে এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি।

নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে দুর্ঘটনা এড়াতেই এই বিশেষ উদ্যোগ। আমরা গত ২৭ ডিসেম্বর পেট্রোল পাম্প মালিকদের নিয়ে মিটিং করেছি। তারা সম্মতি দিয়েছেন ও আমাদের সহযোগিতা করছেন। এই উদ্যোগ নেওয়ার কারণ হলো- আমরা চাই দুর্ঘটনায় যেন সাধারণ মানুষের প্রাণ না যায়। এ নিয়ে আমরা প্রতিটা এলাকায় মাইকিং করছি। আমাদের পুলিশ সদস্যরা মনিটরিং করছেন। 

শরিফুল ইসলাম/আরএআর