ময়মনসিংহ নগরীতে প্রথমবারের মতো ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত হয়েছে। নতুন ফসল ঘরে তুলতে নানা আয়োজনের মাধ্যমে শস্য দেবতা মিসি সালজংকে ধন্যবাদ ও উৎসর্গ করে পালিত হয় গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা উৎসব বা গারো নবান্ন উৎসব। 

নগরের বাটিকাশর এলাকার দি আচিক কো অপারেটিভ সোসাইটির মাঠে ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে দুই দিনের উৎসব শুরু হলেও শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) ছিল মূল আয়োজন। 

গারোদের আদি ধর্ম হচ্ছে সাংসারেক। সাংসারেক রীতিতে উৎসবটি হয়। সকালে দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে পূজা-অর্চনা ও ধন্যবাদ উৎসবের আয়োজন করা হয়। 

শস্য দেবতা মিসি সালজংকে অর্চনা করা হয়। সকল ধরনের ফসল দেবতাকে উৎসর্গ করার পর নিজেরা গ্রহণ করেন মান্দিরা। এতে খরাপ কিছু থেকে ফসল রক্ষায় মোরগ দিয়ে রাকাশি পূজা করা হয়। এ সময় গারো সংস্কৃতির বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। এই দিন ছোট বড় সবাই রঙ-বেরঙের পোশাক ও পাখির পালক মাথায় দিয়ে ঢোলের তালে তালে নাচে।

এ উৎসবের মাধ্যমে এভাবেই নতুন প্রজন্মের গারোরা জেনে যায়- সৃষ্টিতত্ত্ব, দেবতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, দর্শন, পৌরাণিক কাহিনী ও গারোদের অতীত গৌরবময় ঐতিহ্য। ফলে বংশ পরম্পরায় টিকে থাকে গারোদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। এমন অনুষ্ঠান প্রতি বছর আয়োজন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আয়োজকরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ব্যাডমিন্টন ফাইনাল খেলা, চেয়ার দখল ও হাঁড়ি ভাঙ্গা খেলা, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সকালে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সভাপতি (নকমা) অর্পন যেত্রা। 

ওয়ানগালা উপলক্ষে বসে মেলা। ১৭টি স্টলে গারো সংস্কৃতির বিভিন্ন জিনিসের পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। নতুন প্রজন্মের শিশুরা বর্ণিল পোশাক পরে উৎসবে আনন্দ আয়োজনের মিলনে অংশ নেন। 

অনুষ্ঠানে সুমন রুরাম আপেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ওয়ানগালা উৎসবের আহ্বায়ক প্যারিস চিসিম, উৎসব কমিটির উপদেষ্টা মার্টিন মানকিন, ওয়ার্ল্ড ভিশনের সিনিয়র ম্যানেজার প্রশান্ত চিরান, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ময়মনসিংহ শহর শাখার সভাপতি অরন্য ই চিরান, গারো হাউজিং সোসাইটির সভাপতি ধিরেন সাংমা, ঢাকা এলাকার নকমা অন্তর মানকিন প্রমুখ।

উবায়দুল হক/আরএআর