নোয়াখালী জেলা আ.লীগের সম্মেলন আজ, শীর্ষ পদে প্রার্থী যারা
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সোমবার (৫ ডিসেম্বর)। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা জেলায় সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সম্মেলনস্থল শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামসহ পুরো জেলা শহর মাইজদী সেজেছে বর্ণিল সাজে। তোরণ, বিলবোর্ড আর ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো জেলা।
সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃণমূলে দলকে গোছানো এবং আগামীর নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয়ী করা ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে এই কমিটিকে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর। জেলা শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে আরেক প্রার্থী ছিলেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল। সম্মেলন ঘিরে সেদিন একরামুল করিম চৌধুরী ও সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের সমর্থকদের মধ্যে শহরে ব্যাপক সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৭০ জন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কমপক্ষে পাঁচজন করে প্রার্থী হয়েছেন। সভাপতি পদে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী আলোচনায় রয়েছেন।
আর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন এবং আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল।
দলীয় নেতৃবৃন্দ জানান, এবারের সম্মেলনে প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে। নোয়াখালী শহিদ ভুলু স্টেডিয়ামে সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল মঞ্চ। সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হবে। সবার অংশগ্রহণে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা। নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় সিন্ধান্ত যেটাই হোক তারা সেটা মেনে নিয়েই রাজনীতি করবেন।
জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান মঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলকে সুসংগঠিত করেছেন নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে এবং দলের জন্য ত্যাগ শিকার করেছেন, তেমনিই কর্মীবান্ধব নেতাই যেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের যাদের দায়িত্ব দেবেন আমরা তাদের নিয়েই কাজ করব। আগামী দিনে সব আসনে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগ কাজ করবে।
সহিদ উল্যাহ খান সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বের ধারাবাহিকতায় সম্মেলনে আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী। এর আগে ২০১৯ সালের সম্মেলনেও আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলাম। এখন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি তা মেনে নেব।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৪ বছরে জেলায় আওয়ামী লীগের কেউ যা করতে পারেননি, আমরা আহ্বায়ক কমিটি সেটা করে দেখিয়েছি। আমরা দলকে তৃণমূল থেকে সুসংগঠিত করেছি। আমি সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী। তবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেব।
সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কোনো পদের জন্য নাম ঘোষণা করব না। আমার বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রয়েছে। উনারা যদি মনে করেন তাহলে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জের। তাই নির্বাচনকে মাথায় রেখে যোগ্যদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি হবে- এটাই আমার প্রত্যাশা। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি দলকে সুসংগঠিত করে আগামী নির্বাচনের কাজ করব।
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। সম্মেলনে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি। সম্মেলনে আমি সভাপতি প্রার্থী।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। নিজ জেলার এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্যসহ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
হাসিব আল আমিন/আরএআর