নোয়াখালী জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নিয়ে জল্পনা-কল্পনা
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সহিদ উল্যাহ খান সোহেল ও শিহাব উদ্দিন শাহীন
সম্মেলনের মাধ্যমে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও শুধু সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা এইচএম খাইরুল আনম চৌধুরী সেলিমের ওপরই আস্থা রেখেছেন।
তবে একাধিক প্রার্থী থাকায় সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেননি ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে শুধু সভাপতির নাম ঘোষণা করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ওবায়দুল কাদের বলেন, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা সভাপতির নাম ঘোষণা করছি। এখানে বিভক্তি আছে তাই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করছি না। নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যমত্যে না পৌঁছায়, তাহলে আগামী ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করা হবে।
এইচএম খাইরুল আনম চৌধুরী সেলিম ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, পরে সভাপতি এবং সর্বশেষ গেল ১৪ মাস ধরে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন
সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে খাইরুল আনম চৌধুরী সেলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার প্রতি শেখ হাসিনা ও আমার নেতা ওবায়দুল কাদের আস্থা রেখেছেন। আমি সেই আস্থা থেকেই কাজ করে যাব। আগামীতে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করব। সব আসনে প্রধানমন্ত্রীর নৌকা বিজয়ী করতে কাজ করব।
তবে সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা না করায় জেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন- বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন এবং আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল।
কে হচ্ছেন আগামীর সাধারণ সম্পাদক- সেটা নিয়ে এখন জেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে জল্পনা-কল্পনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দিন বাকি নেই। মাত্র এক বছর হাতে আছে। নতুন করে সম্মেলন হওয়ার সুযোগও নেই। যেহেতু সভাপতি হয়ে গেছেন এখন সাধারণ সম্পাদক পদে এমন একজনকে বেছে নিতে হবে, যিনি শুধুমাত্র কথায় নয়, কাজ করে দলকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
তবে সম্মেলনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের নাম প্রস্তাব করেন নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। মোরশেদ আলমের ঘোষণার পরই নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ প্রস্তাব সমর্থন করেন।
সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম ও মামুনুর রশিদের প্রস্তাব ও সমর্থন ঘোষণার আগে নিজের বক্তৃতায় অনেকটা আগ বাড়িয়ে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক পদে সহিদ উল্যাহ খানের নাম সুপারিশ করেন।
একরামুল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যে মেয়র সহিদ উল্যাহ খানের নাম উল্লেখ করে বলেন, এই ছেলের মনে আমি কষ্ট দিলেও সে কখনো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। যারা নেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, সম্মান করতে জানেন না, তারা নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা রাখেন না।
সহিদ উল্যাহ খান সোহেল নোয়াখালী পৌরসভার টানা দুই মেয়াদের মেয়র। এর আগে তিনি শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর নামসহ সাধারণ সম্পাদক পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন। তিনি এর আগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের টানা দুই মেয়াদের চেয়ারম্যান।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৭ ডিসেম্বর কিংবা তার দু-এক দিন পর এই দুই প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই ভোটে দলের ৯টি উপজেলার কাউন্সিলররা বেছে নেবেন তাদের পরবর্তী মেয়াদের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, সাধারণ সম্পাদক পদে আমরা প্রার্থী দুই জন আছি। কাউন্সিলরদের ভোটাভুটিতে নির্ধারণ হবে সাধারণ সম্পাদক কে হবেন। তবে আগামী দিনে দলকে এগিয়ে নিতে আমাকে নির্বাচন করলে কোনো আপত্তি থাকবে না।
এ বিষয়ে সহিদ উল্যাহ খান সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও আমাদের বড় ভাই সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা তা মেনে নেব। আমার কিছুই বলার থাকবে না। আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। সেসময় সভাপতি হিসেবে এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে দীর্ঘ সময় নানান ঘাত-প্রতিঘাত, সহিংসতা ও হতাহতের পর সেই কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ না করে দুই বছরের মাথায় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে আহ্বায়ক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেলকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ৮৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
হাসিব আল আমিন/আরএআর