নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে রোবায়েত ইসফাক প্রিতমকে তুলে নিয়ে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে আদালতে পাঠায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

 গ্রেপ্তার রোবায়েত ইসফাক প্রিতম নারায়ণগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। 

তার পরিবারের দাবি-  প্রিতম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন হিরাঝিল এলাকার প্রিতম টাওয়ার ঘিরে ফেলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের শতাধিক সদস্য। ভোর পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে মনিরুলের ছেলে প্রিতমকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নাশকতার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মনিরুলের স্ত্রী নিলুফার ইসলাম অভিযো করে বলেন, গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশির নামে বাড়িঘর তছনছ করেছে। আমার স্বামী এর আগে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আছেন। সম্প্রতি নাশকতার অভিযোগে যে মামলা হয়েছে, সেখানে আমার স্বামী ও ছেলে আসামি নয়। রাজনৈতিক মামলায় আমার স্বামী জামিনে আছেন, এরপরও পুলিশ হয়রানি করছে। বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্বামীকে না পেয়ে জোর করে আমার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। দুপুরে খবর পেয়েছি তাকে নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে কখনো কোনো মিটিং-মিছিলে যায়নি, রাজনীতি করে ওর বাবা। এই কথাগুলো পুলিশ সদস্যদের বারবার বলার পরও তারা আমার ছেলেক টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি তারা খুব বাজে ব্যবহার করেছে, যা কোনো ভাবেই কম্য নয়।

মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, বাড়িতে তল্লাশি করে আমাকে না পেয়ে আমার ছোট ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন শুনছি তাকে এর আগে মৌচাকে নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়েছে। সরকার বিএনপির আন্দোলন দমন করতে পুলিশকে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে ১২টি মামলা হয়েছে আমি ও আমার ছেলে প্রিতম এর কোনোটির আসামি নই।

তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে পুলিশ নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে তল্লাশি অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের পরিবারকে হয়রানি করছে। মামলায় আসামি না হয়েও আমিসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রায় ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার আতঙ্কে আজ ঘরছাড়া। আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হয়েও হয়রানির শিকার হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিভাগীয় সমাবেশ পণ্ড করতে সরকারের সব দমননীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঢাকায় জনসমুদ্রের সৃষ্টি হবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনিরুল ইসলাম রবির ছেলে প্রিতমকে থানায় আনা হয়েছিল। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মৌচাক এলাকায় বিএনপির কর্মীরা পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ করে পালিয়ে যায়। সেই মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে প্রিতমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। 

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি প্রিতমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর আগে তাকে গতকাল রাতে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়। পরে আজ তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

আবির শিকদার/আরএআর