ইনসেটে মৃত সিরাজুল ইসলাম

পাবনা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নাকের পলিপাসের অস্ত্রোপচারে ভুল চিকিৎসায় সিরাজুল ইসলাম (৩০) নামে এক টেক্সটাইল প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। 

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাবনার বীণাবাণী হলের সামনের গোপালপুরের লাহিড়ী পাড়ার ডিজিটাল হাসপাতালে সিরাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তিনি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে। তিনি হা-মীম গ্রুপের হা-মীম স্পিনিং মিলে প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার দুই বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। 

সিরাজুল ইসলামের স্বজনরা অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহ আগে সদর থানা সংলগ্ন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হারুন-অর-রশিদের চেম্বারে চিকিৎসা নেন সিরাজুল। সে সময় ডা. হারুন-অর-রশিদ তাকে লাহিড়ী পাড়ার ডিজিটাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে সিরাজুল তিন দিনের ছুটি নিয়ে গত মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে পাবনায় আসেন। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডা. মো. হারুন-অর-রশিদ ও পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক (অ্যানেস্থেসিয়া) ডা. শামসুল হকের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল হাসপাতালে তার নাকের পলিপাসের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসকরা চলে যাওয়ার পরপরই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ সময় বার বার চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকাডাকি করলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্বজনদের আহাজারিতে চিকিৎসক ও হাসপাতালের ম্যানেজার এসে দেখেন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ডা. মো. হারুন-অর-রশিদ, ডা. শামসুল হক এবং হাসপাতালের ম্যানেজারসহ কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যান। পরে স্বজনরা ৯৯৯- এ ফোন দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে কথা বলতে ডা. মো. হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক শামসুল হক বলেন, আমি যখন তাকে অ্যানেসথেসিয়া করি তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। অস্ত্রোপচারের পর তার জ্ঞান ফিরেছিল, সে সময় তার সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। পরে তার মৃত্যু কীভাবে হলো এটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে আমাদের কোনো ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়নি।

এ বিষয়ে হাসপাতালের ম্যানেজারকে পাওয়া না গেলেও সহকারী ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম ও ওটি ইনচার্জ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিসের জন্য মারা গেল আমরা সেটা বলতে পারছি না। এখন কেন মারা গেল এটা আল্লাহ ছাড়া তো আর কেউ বলতে পারবে না। তবে তার ফিটনেস রিপোর্ট ভালো ছিল।

এ ব্যাপারে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে দেখব। যেহেতু সেখানে রোগী ও হাসপাতাল দুটি পক্ষ রয়েছে, এখন কেউ যদি লিখিত অভিযোগ না দেয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। 

এর আগেও শহরের অনেক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সেসব ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব ঘটনায়ই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

এ ব্যাপারে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অথবা স্বজনদের লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এসব ক্লিনিক-হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাকিব হাসনাত/আরএআর