বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জ এর দুই মহাসড়কসহ বিভিন্নস্থানে বসানো হয়েছে একাধিক পুলিশের চেকপোস্ট। তবে আজ ঢাকা মাওয়া ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশ বেশ ফাঁকা ছিল। মহাসড়কগুলো ও মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াতের অন্যান্য সড়কগুলোতে যাত্রী ও গণপরিবহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল।

সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জে গজারিয়ার অংশে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। এসময় ঢাকামুখী দূরপাল্লার বাস, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।

উপজেলার বাউশিয়া পাখির মোড়, দরি বাউশিয়া, ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড, আনারপুরা, ভাটেরচর ও জামালদী বাস স্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে এসব এলাকায় কোনো যাত্রীর চলাচলে বাধা কিংবা কাউকে আটকের খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক রুটে চলাচলকারী এস আলম পরিবহনের বাসচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা থেকে ভবেরচর পর্যন্ত ১০টি জায়গায় পুলিশ তার বাসের কাগজ যাচাই করেছে। তবে কোথাও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

এদিকে ঢাকা মাওয়া মহাসড়কের পদ্মা সেতু টোল প্লাজা অভিমুখ, সিরাজদিখানের নিমতলা, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগরের ছনবাড়ি মোড় এলাকায় বিভিন্নস্থানে পুলিশের টহল হতে যানবাহনে তল্লাশির চিত্র দেখা যায়।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর ও টঙ্গীবাড়ী এলাকায় ঘুরে বিভিন্নস্থানে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা যায়। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তা বেশ ফাঁকা রয়েছে। যাত্রী ও পরিবহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় অনেকটাই কম।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্নস্থানে প্রায় ৩০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এটি একটি পুলিশের রুটিন মাফিক কাজ। তবে চেকপোস্ট থেকে কাউকে আটক করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কাউকে আটক করা হয়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার‌ (সদর সার্কেল) খায়রুল হাসান জানান, বরাবরের মতোই আমরা জেলাজুড়ে সতর্ক অবস্থানে আছি। চেকপোস্টগুলোয় রুটিন মাফিক তল্লাশি চলছে। যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকিয়ে দিতে পুলিশের তৎপরতা আছে

এদিকে মুন্সীগঞ্জের থানায় থানায় মামলা হামলা ও ধর-পাকড় উপেক্ষা করে মুন্সীগঞ্জের হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক আগেই ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। 

গণমাবেশ ঘিরে ৬টি উপজেলার স্থানীয় বিএনপির প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এরপর শুরু হয় ধর-পাকড়। জেলায় প্রায় ৪০-৪৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এবং ও পুলিশের ধর-পাকড় শুরু হওয়ার পরই দলীয় নেতাকর্মীরা ঢাকামুখী হয়ে পড়েন। 

মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশে যোগদান করবে বলে জেলা বিএনপির নেতাদের দাবি। এছাড়া, বিএনপি নেতাদের বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান থেকেও সমাবেশে যোগ দিচ্ছে হাজারো শ্রমিক।

একাধিক নেতা বলেছেন, মুন্সীগঞ্জ সদর, গজারিয়া, টঙ্গীবাড়ি, লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলা ও মুন্সীগঞ্জ ও মীরকাদিম পৌরসভার মোট ৮টি ইউনিট থেকে প্রত্যেক নেতাকে টার্গেট অনুযায়ী নেতাকর্মী-সমর্থক নিয়ে গণসমাবেশে যোগদান করতে বলা হয়েছে। ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে স্থায়ীভাবেও বসবাস করছে হাজারো নেতাকর্মী। সবমিলিয়ে গণসমাবেশে মুন্সীগঞ্জের দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নামবে বলে তারা জানিয়েছেন।

এদিকে, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, অটোরিকশা ভাঙচুরের ঘটনাসহ একই অভিযোগে বিএনপির প্রায় ৪৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৬টি থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলা ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা বাদী হয়ে স্ব-স্ব থানায় মামলা করেন।

মামলা হওয়ার পরপরই ওসব মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা দিতে এসব পুলিশের সাজানো নাটক বলে বিএনপির নেতাদের দাবি। 

জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর রিপন মল্লিক বলেন, পুলিশের ধর-পাকড় শুরু হওয়ার পরপরই দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগদান করতে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের ঢাকায় যারা বসবাস করে এবং জেলার ৮টি ইউনিট মিলে সমাবেশে অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক যোগদান করছে। এটা ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ কারণে ঢাকার প্রতিবেশী জেলা হিসেবে মুন্সীগঞ্জ থেকে অধিক সংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থকের উপস্থিতি ঘটাতে হবে গণসমাবেশে।

ব ম শামীম/এমএএস