মোস্তফা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে

বাসায় আসবাবপত্র তৈরির সুবাদে লাভলী বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয় কাঠমিস্ত্রি মো. মোস্তফার। ৫ বছর ধরে পরিচয় হলেও বছর খানেক আগে তারা পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। দুজনই সংসার-সন্তান ছেড়ে নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেন। প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় বাসা বের হন লাভলী বেগম। আর সেই রাতেই প্রেমিক মো. মোস্তফা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায়। গত ৩ মার্চ (বুধবার) গোমনাতি ইউনিয়নের আমবাড়ী গ্রামের কৃষক তইবুর রহমানের স্ত্রী লাভলী বেগমের (৩০) মরদেহ উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজ সুন্দর খাতা গ্রামের একটি ভূট্টাখেত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের স্বামী তইবুর রহমানকে আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বিপিএম, পিপিএমের নির্দেশে প্রযুক্তির সহায়তায়  সোমবার (৮ মার্চ) দুপুরে লাভলী বেগমের পরকীয়া প্রেমিক মো.মোস্তফাকে (৩৫) গ্রেফতার করে ডিমলা থানা পুলিশ।

ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক বছর আগে নিহত লাভলীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে কাঠমিস্ত্রি মোস্তফা। দুজনই তাদের সংসার ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ২ মার্চ (সোমবার) সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। রাত আনুমানিক ৯টায় মোস্তফার স্ত্রী তাকে মুঠোফোনে জানায়, তার ছোট মেয়ে কান্না করছে।

এ কথা শোনার পর মোস্তফা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। তিনটা বাচ্চা, স্ত্রী সবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে লাভলীকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবে সে? আবার লাভলীকে বিয়ে করতে পারবে না জানালে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বা বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে পারে লাভলী- এ সকল ভাবনায় দিশেহারা হয়ে যায় মোস্তফা। পরে প্রেমিকা লাভলীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এই চিন্তা থেকে নির্জন স্থানে লাভলীকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ পাশের ভুট্টাখেতে রেখে পালিয়ে যায় মোস্তফা।

তদন্ত কর্মকতা সূত্রে জানা যায়, ৫ মাস আগে মোস্তফা লাভলী বেগমের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ধার হিসেবে নেয়। টাকা ফেরত দিতে দেরি হলে লাভলী ও তার পরিবারের লোকজন বাজারের মধ্যে মোস্তফাকে আটক করে। তার কাছ থেকে জোর করে ৫০০০ টাকা আদায় করে। 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বিপিএম, পিপিএম জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর মাত্র চার দিনের নিরলস পরিশ্রমে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মাহমুদ আল হাসান রাফিন/এসপি