মিলন খান

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় আলোচিত দুই সন্তানের জননী মারুফা বেগম হত্যার ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। নিহতের স্বামী ও দেবর ঘটনাটি ডাকাতি বলে দাবি করলেও পুলিশ নিহতের স্বামী উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন খানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ বলছে, মোটিভ পর্যবেক্ষণে শুধু হত্যা নয় মরদেহের সঙ্গে ঘাতকের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ধরে তদন্ত অগ্রসর হচ্ছে। প্রথমত, খুনি গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার পরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ দাঁত ভেঙে উপরে ফেলেছে। এই অপরাধ সংঘটনে দীর্ঘ সময় ও পরিকল্পনার দরকার। দ্বিতীয়ত, একই কক্ষে স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার সময় স্বামী অক্ষত থাকে কীভাবে? তৃতীয়ত, ঘটনার রাতে বাড়ির কলাপসিবল গেটের তালা লাগানো হয়নি। অথচ অন্যান্য দিন সন্ধ্যা রাতেই গেট বন্ধ করা হয়। চতুর্থত, হত্যার পর মারুফার সঙ্গে থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও একটি ড্রয়ার খুলে দুই লাখ টাকা নিয়ে যায় ঘাতকরা। বাসার অন্য রুমের মালামাল থাকলেও সেগুলো কিছুই নেয়নি।

তাই ধারণা করা হচ্ছে মারুফার স্বামী মিলন খান হত্যাকারীদের পূর্ব পরিচিত নয়তো সে নিজেই ঘাতক। পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছেন ওই গৃহবধূ।

তবে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন হওয়ায় বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। আশা করি দ্রুতই প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে।

নিহত মারুফা বেগমের বোনজামাই সবুজ হাওলাদার বলেন, মিলন খানের রহস্যজনক আচরণের কারণে আমার শ্বশুর হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমাদের ধারণা ডাকাতি ও স্ত্রী হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে সে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত মিলন তার স্ত্রীকে সরাসরি হত্যা করেনি।

মিলন খানের বোনজামাই মোহাম্মদ হোসেন মিন্টু বলেছেন, আমরা কেউ বিশ্বাস করি না মিলন এমন কোনো কাজ করতে পারে। কারণ মিলন তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতো। এছাড়া হামলায় আহত হয়ে মিলনও দুই দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে আমরাও চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য বেড়িয়ে আসুক।

মিলনের বড় ভাই সবুজ খান বলেন, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের ডিভোর্স হয়েছে কমপক্ষে ১৩ বছর হবে। সেদিক থেকে কোনো জটিলতা আছে বলে মনে করি না। ওই রাতে প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটি হয়েছে ডাকাতি। বাসার কলাপসিবল গেট ভেঙে ডাকাত দল প্রবেশ করে। বাসায় থাকা নগদ আড়াই লাখ টাকা ও তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুট করার সময় মারুফা ডাকাতদের বাধা দেয়। এ সময় ডাকাতরা গলা কেটে তাকে হত্যা করে। স্ত্রীকে রক্ষা করতে মিলন এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু মিলনকে আসামি করে মামলা হয়েছে তাই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা চাই সঠিক তদন্ত হোক। সঠিক তদন্ত হলে মিলন নির্দোষ প্রমাণিত হবে।

প্রসঙ্গত, ২২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিলন খানকে তার বাসা থেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় জীবিত এবং তার স্ত্রী মারুফা বেগমের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আউব আলী বাদী হয়ে মারুফার স্বামী মিলন খানকে প্রধান এবং আরও অজ্ঞাত ৭ জনকে আসামি করে পরের দিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ