‘তারা গাছ কাটেনি, কেটেছে কৃষকদের হাত-পা’
‘৪০০ গাছ ৮ থেকে ১০ জনের পক্ষে কাটা সম্ভব না। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন এসেছিলেন। গাছগুলো কাটার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ধারালো দা, হাঁসুয়া, আড়ি (ছোট করাত) ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু তারা গাছ কাটেনি, মূলত কেটেছে কৃষকদের গলা, হাত-পা।’
রাজশাহীর বাঘায় এক রাতে ২০ জন কৃষকের ৪০০ আমগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবু সামা, বাবু ও হাফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
গত রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাতের কোনো এক সময় উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে থানায় লিখিত অভিযাগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের মাঠে সাধন কুমার প্রামাণিক, আবু সামা, জামাল, অমৃত, রানা, অজিত, নিখিল, গপেন, নিপেন, শৈলেন, হাফিজুল, চিত্তরঞ্জন, প্রদীপ, নিপেন, ভুপেন, নিত্য, রতন, চিত্তরঞ্জনসহ ২০ জন কৃষক ২ থেকে ৫ বছর আগে বিভিন্ন জাতের আম গাছ রোপণ করেন। প্রতিটি গাছে আম ধরা শুরু করেছে। তবে রাতের আঁধারে কে বা কারা শত্রুতা করে ৪০০টি গাছ কেটে ফেলেছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে হাবাসপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবু সামা ছয়জন শ্রমিক নিয়ে নিজের জমির কেটে ফেলা আমগাছগুলো সরাচ্ছেন। যাতে চাষ করা গমগুলা নষ্ট না হয়। তার জমি থেকে গাছ ও গাছের ডালগুলো নিয়ে সড়কের পাশে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে ভ্যানে করে শ্রমিকরা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতোগুলো গাছ এক রাতে কেটে ফেলার খবর আশ-পাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। কাঠ বা গাছের বেপারীরা যোগাযোগ করছেন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে।
কৃষক আবু সামা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজের চোখে দেখিনি। রাতের আঁধারে গাছগুলো কাটা হয়েছে। আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে। কী করবো, কার কাছে অভিযোগ করব। গতকাল পুলিশ এসেছিল। তারা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছে। সব লিখে নিয়ে নিয়ে গেছে। আপনারাও লেখেন যাতে করে এই কাজ আর না হয়।
তিনি বলেন, ‘এ বছর আমটা ধরে মার গেলো (পেলাম না)। আমার মোট ২৮টি গাছের মধ্য ১৮টা গাছ আকবারে কেটেছে। এক দাগে এই ২৮টি আমের গাছ। সাত বছর আগে এই গাছগুলো লাগিয়েছিলাম। একটি গাছ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে কিনে শ্রমিক দিয়ে লাগাতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আম পেয়েছি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বছরই আম পাই।’
আবু সামা বলেন, ‘আমরা অনুভব করে পারছিনি (পাচ্ছি না)। রাগ করে হোক বা যেনভাবে হোক এটা করেছে। এটা আমরা এখনো সন্দেহ করতে পারিনি। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে গেছি। তারা তদন্ত করে কী পায় দেখি। কিছুদিন আগে এই এলাকায় আমগাছের ডালগুলো কেটে ফেলেছিল। এখনে হেরোইন খোরকে (সেবী) দিয়ে কেউ কিছু করাচ্ছেন নাকি। ওগুলো আমরা এখনো তথ্য পাইনি। তবে দেশের (এলাকার) মানুষেই আছে এর পিছে। রহস্যটা আমরা পাইনি। তবে অনুভব করছি। এদেশের লোক ছাড়া তো কীভাবে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাত বছর আগে গাছ লাগিয়েছি। প্রতিবছর ১০ মণ আম হয়। যদি প্রশাসন ইচ্ছা করে এই গ্রাম থেকে দুই-চারজনকে ধরলে সব বের হয়ে যাবে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে এই কাজগুলো কারা করেছে। কারা কারা উসকানি দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী হাফিজুল ইসলাম বলেন, এই জমির আম বিক্রি করে কিছু টাকা হয়। সেগুলো দিয়ে চলতে হয়। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা চাই সরকার বিষয়টি দেখবে। আমাদের কিছু ক্ষতিপূরণ দেবে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান ঢাকা পোস্টকে জানান, ৪০০টি আমের গাছ কাটা হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না এই কারণে গাছগুলোর কোনোটির বয়স ৩ বছর, আবার কোনোটির বয়স ১৫ বছর। তবে এগুলো কাটা হয়েছে পুকুর খননের জন্য। যাতে কৃষকের ওপর চাপ তৈরি হয়।
বাঘা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এখনো কোনো ক্লু পাওয়া যায়িনি। তবে তদন্ত চলছে।
আরএআর