কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ভেঙে সকল মালামাল বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শানপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি ১৪ হাজার টাকায় বিক্রয় করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ। এ ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় চলছে।

সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ না করে এ স্কুল ভবন বিক্রির বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন ও প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত একটি বড় পুরাতন ভবন (স্কুলের হল রুম) ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবনটির চারপাশের দেওয়াল ও ওপরের টিন বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ভবন বিক্রি করেছে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন। 

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (৬ মার্চ) রাতের আঁধারে সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদ ও তার লোকজন প্রায় লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ভবন শানপুকুরিয়া গ্রামের মৃত মোবারকের ছেলে বাচ্চুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।  

তারা আরও বলেন, মাত্র ১৪ হাজার টাকায় বিক্রয় করেছেন লক্ষাধিক টাকার সরকারি সম্পদ। বাচ্চু তার লোকজন দিয়ে সারারাত বিদ্যালয়ের ভবনের ইট, বাঁশ, সিমেন্টের খুঁটি ও ছাউনির টিন ভেঙে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন।

অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনটির ক্রেতা শানপুকুরিয়া এলাকার বাচ্চুর বাড়িতে টিন, পুরাতন ইট, সিমেন্টের খুঁটি, বাঁশসহ অন্যান্য মালামাল স্তুপ করা রয়েছে। 

এ ব্যাপারে বাচ্চু বলেন, সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ ও প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে আলোচনা করে আমি এ ভবন ১৪ হাজার টাকায় ক্রয় করি। 

কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ স্কুলের পুরাতন ভবন বিক্রয় করেছে। আমার অবর্তমানে তিনি একাই পুরাতন ভবনটি বিক্রি করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও চাঁপড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মনোয়ার হোসেন লালন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুলের পুরাতন ভবন বিক্রয় করতে হলে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন ও নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রয় করার কথা ছিল। অথচ সহকারী শিক্ষক হারুন আমাদেরকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে এ ভবন বিক্রয় করেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

শানপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন বিক্রয়ের বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানিনা। সহকারী শিক্ষক রাতারাতি এ ভবন বিক্রয় করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমারখালী নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। কুমারখালী শিক্ষা অফিসার ও কুমারখালী থানা পুলিশের ওসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান এবং উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সেলিনা খাতুন।

ওসি মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সেলিনা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরাতন ভবন অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগে সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ এর বিরুদ্ধে শানপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের সভাপতি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে আইননুসারে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

রাজু আহমেদ/এমএএস