হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ অতিথিরা

বিএনপির সব অপতৎপরতার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে এই ঘোষণা দেন তিনি।

গত ২ মার্চ রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তিসহ প্রাণনাশের হুমকি এবং সরকার উৎখাতের ঘোষণার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। বিকেলে নগরীর বাটারমোড় এলাকায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হুইপ স্বপন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে এর আগে ২১ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে রক্ষা করেছেন। তাই আমরা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকিতে বিচলিত নই। বিএনপি পূর্বের ন্যায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে।’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যাদের জন্ম খুনের মধ্য দিয়ে, যাদের চেতনার মধ্যে রক্ত’ তারাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। জিয়াউর রহমান শুধু বঙ্গবন্ধু খুনের সঙ্গেই নয়, কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডেও জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে উল্লেখ করে স্বপন বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগের পক্ষে দেশের জনগণ। সম্প্রতি পৌরসভা নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আর এসব দেখে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি বিষোদগার করছেন। তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।’

রাজশাহী সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।

সমাবেশে এসএম কামাল বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তানের ধারায় ফিরিয়ে নিতে চান, তারাই শেখ হাসিনাকে হমকি দিচ্ছেন। তারাই তারেক জিয়ার নেতৃত্বে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটাতে চেয়েছিলেন। সে ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এ কারণেই বিএনপি নেতা মিনু আবারও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।’

রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন এমপি, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন আক্তার রেনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা প্রমুখ।

এ আগে সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মােসাদ্দেক হােসেন বুলবুল এবং নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল জলিলের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন নগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মুসাব্বিরুল ইসলাম।

পরে দুপুরের দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘২ মার্চের সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিদ্বেষমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক। সেদিন তারা মূল কর্মসূচিতে না গিয়ে বিষোদগার করেছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে দৃশ্যমান উন্নয়ন তা দেখে তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে।’

রাসিক মেয়র লিটন বলেন, মিনু সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মিনুকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, হয়তো তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা দেখেছি তাদেরে দলের দফতর সম্পাদক একটি বিবৃতি পত্রিকার অফিসে পাঠিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা এটি মানতে পারিনি। আমরা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করতে চাই। এই ধরনের মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। সেই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে।

২ মার্চ বিকেলে নগরীর মাদরাসা মাঠ-সংলগ্ন কনভেনশন সেন্টারে রাজশাহী নগর বিএনপির আয়োজনে বিভাগীয় সমাবেশ হয়। নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন মিজানুর রহমান মিনু। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মিনু বলেন, আজ রাত, কাল আর সকাল নাও হতে পারে। ’৭৫ মনে নেই?’ সমাবেশে মিনু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন।

এরআগে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক বিক্ষোভ সমাবেশে মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করে আপত্তিকর বক্তব্য রাখেন। এ নিয়ে ওই সময় বিক্ষোভ করে নগর আওয়ামী লীগ। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মিনু।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর