প্রায় আড়াইশো কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষক বাতায়নে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন মৌলভীবাজারের দি ফ্লাওয়ার্স কে.জি অ্যান্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষিকা রোকসানা আক্তার। তার তৈরি করা অনলাইন ক্লাস ও ভিডিও কনটেন্ট থেকে ইতোমধ্যে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পাঠদান করেছেন।

রোকসানা আক্তার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার গ্রামের মরহুম মো. আব্দুল মান্নানের বড় মেয়ে। তার বাবা পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। স্বামী মো. শরীফুর রহমান বিসিএস ১৭তম ব্যাচের একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। বর্তমানে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।

রোকসানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে জানান, করোনাকালীন ঘরে বসে থাকেননি। ফেসবুক পেজ, গ্রুপ এবং ইউটিউবে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে। একইসঙ্গে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের a2i এবং তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের অধীনে শিক্ষক বাতায়নে অষ্টম শ্রেণির ৯ম-১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান ও কৃষি শিক্ষা বিষয়ে অসংখ্য মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট এবং ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করেন। 

সরকারের শিক্ষক বাতায়ন কাজ করে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য। বাতায়নে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গঠনমূলক কন্টেন্ট তৈরি করে যাচ্ছেন। যার ফলস্বরূপ তিনি শিক্ষক বাতায়নের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন।

তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষক বাতায়নে যুক্ত একটা অনলাইন স্কুল আছে ‘Learn Biology’। এ পেজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য করোনাকালীন প্রায় ২০০ ক্লাস নিয়েছেন।

শিক্ষক বাতায়ন (www.teachers.gov.bd) কর্তৃপক্ষ ১৫ দিন পরপর ৪টি ক্যাটাগরিতে সেরাদের নাম প্রকাশ করে থাকে। যেখানে ২ জনকে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা, সেরা অনলাইন পারফর্মার, সেরা উদ্ভাবক এবং সেরা নেতৃত্ব হিসেবে ধরা হয়। শিক্ষক বাতায়নে ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৪৬৬ জন শিক্ষক রেজিস্ট্রেশন করেছেন বা যুক্ত হয়েছেন।

রোকসানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিশ্রম কোনো দিনই বৃথা যায় না। আমি সেরা হওয়ার জন্য কাজ করিনি। করেছি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য। আগামীতে যেকোনো সমাজসেবা, দেশের জন্য কল্যাণমূলক এবং শিক্ষামূলক যেকোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। 

তিনি আরও বলেন, এটুআই এর সঙ্গে জেলা শিক্ষক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছি এবং নিয়মিত শিক্ষক বাতায়নে কন্টেন্ট তৈরি করে প্রায় ২৫০ এর বেশি ভিডিও কন্টেন্ট ও প্রেজেন্টেশন করে শিক্ষক বাতায়নে মাধ্যমে আপলোড করেছি। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন প্লাটফর্মে কাজ করার সুযোগ পেয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এওয়ার্ড ২০২২-২৪ এ ফুল এ্যাওয়ার্ডের জন্য একজন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দেশি-বিদেশি স্কুলের সঙ্গে কাজ করেছি। এরপর ২০১৪ সালে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

প্রসঙ্গত, রোকসানা আক্তার দি ফ্লাওয়ার্স কে জি অ্যান্ড হাইস্কুলে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২২ জেলা পর্যায়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হন রোকসানা আক্তার। তিনি পড়ালেখা করেছেন পতনউষার উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ এবং এম সি কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পাস করেন। বিএড করেছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত হয়ে স্কলারশিপ পেয়ে নিউজিল্যান্ডে বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন তিনি। 

ওমর ফারুক নাঈম/এমএএস