গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়ে বিএনপি নেতা মো. আলী আজমের মায়ের জানাজা পড়া কারাবিধি মোতাবেক হয়েছে। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনিসুর রহমান ও জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন।

বিএনপি নেতার স্বজনরা জানান, উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলী আজমের মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন। শেষবারের মতো মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। কিন্তু ওইদিন দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি মেলে বিএনপির এই নেতার। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টায় নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজাস্থলে উপস্থিত হন বিএনপি নেতা আলী আজম। বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। জানাজাসহ পুরো সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম।

আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান জানান, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তার ভাইকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বলা হয়েছিল কিন্তু পুলিশ খুলে দেয়নি।

জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত মুসুল্লি ও স্থানীয় লোকজন। এ অবস্থায় আলী আজমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাছে আবেদনের পর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নির্দেশনা দিয়ে প্যারোলে মুক্তির আদেশ দিয়েছি। এখানে জেলকোড বা অন্যান্য বিষয় রয়েছে। জেলকোডে কিন্ত ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা বলা আছে। তবে এটা জানাজার সময় খুলবে কি না, এ বিষয়টি নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের বিষয়। এছাড়া সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনা (জঙ্গি পালিয়ে যাওয়া) ঘটেছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা বলে দিয়েছি। আলী আজমের ক্ষেত্রে মানবিক একটি বিষয় রয়েছে তবে এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ বলেন, আসামি জেলের বাইরে গেছে, তাই নিরাপত্তার জন্য ডান্ডাবেড়ি দিয়েছি। আমাদের কাছে সব আসামি সমান। দেশের জঙ্গিরা কারাগারে থাকা অবস্থায় আমাদের সঙ্গে মধুর ব্যবহার করে আবার যখন ঘটনা ঘটায় তখন আমাদেরকেই জবাবদিহি করতে হয়। বিএনপি নেতা আলী আজমের ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। জেলকোডে ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা বলা আছে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি দেশে আইনের কোনো শাসন নেই। সারাদেশে নিয়মিতভাবে মানবাধিকার  লঙ্ঘিত হচ্ছে। গাজীপুরের এ ঘটনাটি তার বাস্তব উদাহরণ। একজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে এমন আচরণে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

শিহাব খান/এমজেইউ