জলাধারের সীমানা নিয়ে হামলার ৪ দিন পর মামলা
নীলফামারীর ডিমলায় বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার (জলাধার) খননের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নি সংযোগের ঘটনার ৪ দিন পর ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জলঢাকা ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী একরামুল হক বাদী হয়ে ডিমলা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান। তিনি বলেন, ঘটনার দিন পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে এলাকাবাসী অতর্কিত হামলা চালায়। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের কালীগঞ্জে অবস্থিত সেচ প্রকল্প এলাকার কুঠিরডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনটি মোটরসাইকেল, এস্কাভেটর ও ড্রেজার মেশিন। পরে থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আর খবর পেয়ে ডিমলা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এলাকাবাসী জানান, ১৯৬৮ সালে বুড়ি তিস্তা নদীর ওপর সেচ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। সেসময় কালীগঞ্জ নামকস্থানে ৩০০ ফুটের একটি ব্যারাজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে এলাকার পাঁচ গ্রামের প্রায় এক হাজার ৩০০ একর জমিতে জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলাধারের জমি অধিগ্রহণ করেনি সরকার। ফলে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে এসব জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড জমির মালিকানা দাবি করে পুনরায় জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে কৃষকরা নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে পাঁচটি মামলা করেন। বর্তমানে এসব মামলা চলমান রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে কাজ শুরু করতে চাইলে এলাকাবাসী বাধা দেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় পাঁচটি গ্রামের এক হাজার ২১৭ দশমিক ৬১ একরের মধ্যে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার রয়েছে। গ্রামগুলো হলো- ডিমলা উপজেলার পচারহাট, রামডাঙ্গা ও কুঠিরডাঙ্গা এবং জলঢাকা উপজেলার খারিজা গোলনা ও চিড়াভিজা গোলনা। ওই পরিমাণ জমির মধ্যে সম্প্রতি ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি প্যাকেজে ৬৬০ একর জমিতে রিজার্ভার (জলাধার) খননের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে জমির সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। সরেজমিনে সার্ভে করে রিজার্ভারের সীমানা নির্ধারণ করার পর সেটি অনুমোদন সাপেক্ষে খনন কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে।
কুটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রুবেল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তৎকালীন আমাদের বাপ দাদাদের পানি দিলে উপকার হবে বুঝিয়ে ওরা জমি নিয়ে ১৯৬৮ সালে এখানে পানি জমা রাখার জন্য প্রকল্প নেয়। তবে সে প্রকল্প সফল না হলে আমরা জমি নিয়ে চাষাবাদ করি। এই জমিগুলাতে প্রায় ৩৫ হাজার কৃষক জীবিকা নির্বাহ করে। যদি এগুনো নেয় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। এ নিয়ে আমরা কয়েকবার আদালতে গেছি হাইকোর্টের রিটও আমাদের পক্ষে। এখন নতুন করে তারা নানাভাবে আমাদের হেয় করতেছে। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৫ জন লোককে কারাগারে আটকে রাখছে। সরকারের কাছে জোর দাবি আমাদের রুটি রোজগারের জায়গাটা অন্তত ভিক্ষা দেন।
একই গ্রামে জাহিদুল ইসলাম (যাদু) বলেন, আদালতে এই জমি নিয়ে আমাদের পাঁচটি মামলা চলমান। হাজার হাজার পরিবারের বাস এখানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসেও আমাদের কথা শুনেছেন, তবে স্থানীয় কিছু কুচক্রই মহলের কারণে এখানে আবার খননের কাজ শুরু করার পাঁয়তারা করছে তারা। তবে আমরা তা হতে দেবো না। না খেয়ে যেহেতু মরতে হবে, সেহেতু আন্দোলন করেই মরব আমরা।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সেখানে জলাধার খননের জন্য যাইনি। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে জমির সীমানা নির্ধারণের দিন ছিল। এজন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়েছিল। সেখানে আমরা উপস্থিত হলে এলাকার লোকজন বাধা সৃষ্টি করে অতর্কিত হামলা চালায় ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এস্কাভেটর ও ড্রেজার মেশিনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করা হয়েছে।
শরিফুল ইসলাম/এমএ