রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন
২৫৪ জনের মধ্যে এসএসসির গণ্ডি পার হতে পারেনি ৫৩ প্রার্থী
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস ও এর নিচে। এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৪৬ জন। এর মধ্যে ৯৩ জন এসএসসি পাস, ৫৩ জন মাধ্যমিকের গণ্ডি অতিক্রম করেননি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা ৭০।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করেন সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ২০১৭ সালে নির্বাচনের তুলনায় ২০২২ সালে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা কমেছে। ২০১৭ সালে ছিল ৬০ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা এবার ৫৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালের ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে থেকে বেড়ে এবার হয়েছে ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, নয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চারজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, তিনজনের স্নাতক, একজনের এইচএসসি ও একজনের এসএসসির নিচে। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা চার মেয়র প্রার্থী হলেন জাকের পার্টির খোরশেদ আলম, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল, জাসদের (ইনু) শফিয়ার রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান।
এছাড়া স্নাতক পাস তিনজন হলেন, আওয়ামী লীগের হোসেন আরা লুৎফা (ডালিয়া), জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অমিরুজ্জামানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আবু রায়হানের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ২৫৪ জন প্রার্থীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর পেশা ব্যবসা। চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২৩ জন। আইনজীবী প্রার্থী আছেন ২ জন। অন্যদিকে, হলফনামার তথ্য মতে নয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কেবল মাত্র খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মণ্ডলের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অতীতে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলনের মামলা ছিল।
এদিকে ২০১৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থীর হার সামান্য হ্রাস পেয়েছে। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৫৯ দশমিক ৫০, যা এবার হয়েছে ৫৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭১ শতাংশ প্রার্থী ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। অন্যদিকে, কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক রয়েছেন ৩ জন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে কোটিপতি ছিলেন ৪ জন।
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সুজন জানিয়েছে, ২০১৭ ও ২০২২ উভয় নির্বাচনে ৬৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এই ৬৩ জন প্রার্থীর ২০১৭ সালের হলফনামার সঙ্গে ২০২২ সালের হলফনামার আয়ের তথ্য তুলনা করে দেখা যায়, ৪২ জন প্রার্থীর আয় বেড়েছে, ৭ জনের আয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, ১০ জনের আয় কমেছে। ৪ জন হলফনামায় আয়ের উল্লেখ করেননি।
এরমধ্যে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা হলফনামায় তার আয় দেখিয়েছিলেন ১০ লাখ ১২ হাজার ২১২ টাকা। ওই নির্বাচনে তিনি নির্ভরশীলদের কোনো আয় উল্লেখ করেননি। কিন্তু এবার ২০২২ সালে সদ্য সাবেক এই মেয়র তার নিজের কোনো আয় নেই উল্লেখ করেছেন এবং নির্ভরশীলদের আয়ের ঘরে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন।
এদিকে, প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন থেকে রংপুর সিটিতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়। এজন্য নির্বাচন কমিশন, সরকার, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গণমাধ্যমের কর্মীদেরকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, সুজন রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত মেজর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিম, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট খাইরুল ইসলাম বাপ্পী, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ও সুজনের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী রাজেশ দে রাজু প্রমুখ।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস