নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনেশ্বরী নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের কয়েকশ একর আবাদি জমি। মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তা-ঘাট। তবে এসব দেখেও উপজেলা প্রশাসন না দেখার ভান করছে।

এলাকাবাসীর দাবি, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসন, স্থানীয় সাংবাদিককে ম্যানেজ করেই এ কাজ করে আসছে। এ কারণে চক্রটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পান না ভুক্তভোগীরা।

সম্প্রতি উপজেলার চাঁদখানা বগুলাগাড়ি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী চক্রের লিটন, সাবেক ইউপি সদস্য জিকরুল ও স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর নেতৃত্বে নদী সিকস্তি খাসজমিতে তিন-চারটি ভেকু বসিয়ে প্রকাশ্যে বালু ও মাটি উত্তোলন চলছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে আশপাশে অসংখ্য ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও ভিটেবাড়ি। ভুক্তভোগীরা এ নিয়ে দিন-রাত আতঙ্কিত থাকলেও প্রভাবশালী মহলের ইন্দনে মাটি কাটা থামছেই না।

এদিকে ড্রাম ট্রাক চলাচলে বগুলাগাড়ি এলাকা থেকে তারাগঞ্জ-রংপুর মহাসড়ক ও উপজেলা শহরে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটির হয়েছে বেহাল দশা। মোটরসাইকেল কিংবা অন্য কোনো যানবাহন চলাচলের উপায় নেই। চাঁদখানা ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরবর্তীতে রাস্তা ঠিক করে দেওয়ার শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহার করছেন এমন দাবি প্রভাবশালী চক্রটির। দ্রুত বালু ও মাটি নিয়ে যাওয়া বন্ধসহ রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বগুলাগাড়ি এলাকার গকুল চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেখছেন না রাস্তাটার কি হাল হইছে? তারা এভাবে রাস্তা নষ্ট করি মাটি নিয়ে যাওচে। মেম্বার-চেয়ারম্যান এটা তো জানে। মাটি নিয়া যাওয়া শ্যাষ হইলে নাকি রাস্তা ঠিক করি দেবে। এভাবে নদীর চর কাটি নিয়ে গেলে তো হামার জমি-জায়গা সব শ্যাষ হয়া যাইবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাবেক মেম্বার জিকরুল ও তার ভাইদের নেতৃত্বে নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে সৈয়দপুরের লিটন। এভাবে রাস্তা-ঘাট সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে আশপাশের আবাদি জমি কি হবে তা বলা মুশকিল। দ্রুত এই মাটি কাটা বন্ধ হোক, না হলে এই এলাকার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

ইজারা ছাড়াই মাটি নিয়ে যাওয়া লিটন ইসলাম বলেন, এই জায়গাটা যার তিনি আমার ভাই হন। এখানে মাছের পুকুর বানানোর জন্য খনন করা হচ্ছে। ইজারার প্রয়োজন নেই। এছাড়া এখানে যেহেতু বালু, কুমির চাষেরও প্ল্যান আছে। আর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হইছে, রাস্তা ঠিক করে দেওয়া হবে।

সাবেক ইউপি সদস্য জিকরুল ইসলাম বলেন, এটা আমার জমি। এটা আরও গভীর করা হবে। এর আগে নদী খননের সময় আমাদের অনেকটা জমি কেটে নিয়ে গেছে। এবার আমরা এখানে কাটছি, আমাদের এই জমিটা প্রয়োজন নেই। আমরা স্থানীয় সাংবাদিক, প্রশাসন সবাইকে ম্যানেজ করে এখানে কাজ করছি। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমার সম্পর্কে ভাই হয়। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে।

অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী লিটন ইসলাম বলেন, এই জমিটা যার তিনি আমার আত্মীয় হয়। জমিতে আবাদ হয় না জন্য মাটি কাটা হচ্ছে। এ মাটি কয়েকটা বড় বড় প্রজেক্টে দিচ্ছি। এখানে ইজারার প্রয়োজন নাই। এই জমি আরও গর্ত হবে, তারপর মাছ, হাঁস ও কুমির চাষের প্ল্যান আছে। আর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হইছে, রাস্তা ঠিক করে দেওয়া হবে।

চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন, আমার ইউনিয়ন থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। আমি আপনার মুখেই শুনলাম। এ বিষয়ে আপনি ইউএনও, এসিল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে-ই-আলম সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছিলাম। লোকও পাঠিয়েছিলাম। তখন কেউ ছিল না। চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছিলাম। তিনি পরে আমাকে জানাননি। বিষয়টি আমি দেখব।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলব।

শরিফুল ইসলাম/এসপি