আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যখনই সুযোগ পেয়েছেন আপনারা (নড়াইলবাসী) সবসময় বলেছেন আমরা অবহেলিত। আমাদের প্রতিটা ইউনিয়নে টুকটাক ঝামেলা লেগেই থাকে। রাজনীতি তো পাশের জেলা যশোরও করে। কই তারা তো একবারও বলেনা আমরা অবহেলিত? 

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ স্লোগানকে সামনে রেখে দ্বিতীয় পর্যায়ে লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

মাশরাফি আরো বলেন, ঝগড়া-বিবাদ তারা (যশোর) আমাদের চেয়ে বেশিই করে, কিন্তু জেলার উন্নয়নে তারা এক হয়ে যায়। যেসব জেলায় উন্নয়ন হচ্ছে, তা তাদের মানসিকতার জন্যই হচ্ছে। কোনো উন্নয়নমুলক কাজ আসলে আমরা চিন্তা করি কিভাবে ওই এলাকার কাজটা বন্ধ করা যায়। তাহলে কী দাঁড়ায় আমাদের অবহেলিত জেলার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী?

মুন্সী আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ অনুষ্ঠানের জনতার প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করেন নলদী ইউনিয়ন পরিষদ।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যের কাছে চিকিৎসা সমস্যা, খাল খনন, কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থা, সার সংকট, নদী, রাস্তা-ঘাট, বাজার, খেলার মাঠ, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ঈদগাহ সংস্কার ও নির্মাণসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করেন ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, ছাত্র- শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণ। এসময় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা জনগণের এসব দাবি নোট করেন এবং ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন।

তিনি বলেন, নলদী ইউনিয়নে চার বছরে ১৭টি রাস্তায় খরচ হয়েছে ২৬ লাখ টাকা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ৯ লাখ টাকা, ১২ শত ২০ মিটার রাস্তা এইচবিবিকরণ করা হয়েছে। মিঠাপুর একটি খালের ওপর ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ইউনিয়নের ২টি স্কুলের চারতলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট এক তলা ভবন করা হয়েছে। মিঠাপুর, জিয়াখাল, বাড়ীভাঙ্গার ১৩ কি.মি খাল খননে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও মিঠাপুর/কালা চাঁদপুর গ্রামের ২টি সুইস গেট রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ ৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আপনাদের নলদী ইউনিয়নে পাউবোর দরপত্রকৃত কাজের মূল্য ১৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। নবগঙ্গা নদী খননের কাজ তো চলছেই। আরো বেশ কিছু রাস্তার টেন্ডার হয়েছে যেটার কাজ দ্রুত শুরু হবে।

সার সংকট সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে এমন সমস্যার কথা শুনেছি। বাকি ইউনিয়নগুলোর তথ্য নেওয়ার মত সময়টুকু আপনারা আমাকে দেন। আমি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে এটার সমাধান করে দেবো।

বাধের কারণে ইছামতি বিলে কৃষি জমিতে সেচ সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্রিজ নির্মাণের জন্য এলজিডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যে বাধ দিয়ে পানি আটকাচ্ছে তাতে আপনাদের সেঁচে সমস্যা হচ্ছে। আপনারা ২ দিন সময় দিয়েছেন এর মধ্যে এটা পারবো কি না জানি না। তবে বিশ্বাস রাখেন আমি চেষ্টা করবো কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধান করার। যাই হোক এটা নিশ্চিত থাকেন আমি আপনাদের পক্ষ নিয়েই কথা বলবো। কারণ দিন শেষে আপনাদের নিয়েই আমার চলা ফেরা।

মসজিদ মন্দির সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে একটা তালিকা করেন। তাতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনভেদে কাজ করে দিতে আমার সুবিধা হবে।

আপনার সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে অনেকে প্রভাব খাটায় এ ক্ষেত্রে আপনার পদক্ষেপ? এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, আমার কথা যদি কেউ বলে তাকে নলদী বাজারে বেঁধে রাখবেন। তবে মারামারি করবেন না। প্রমাণ সাপেক্ষে ধরে রাখবেন প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন। আমি কথা দিচ্ছি, এ ধরনের কোনো প্রমাণ পেলে আমি আপনাদের উপযুক্ত বিচার দেবো।

মাশরাফি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন তিনি নড়াইলের এমপি। আমি কিন্তু তার একজন কর্মী মাত্র। নড়াইলের কোনো কাজ নিয়ে গেলে তিনি সাথে সাথে বলেন দিয়ে দাও। নড়াইলের উন্নয়নের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমারা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নে আন্তরিকতার সাথে অংশ নিলে নড়াইলের উন্নয়ন আপনারা দেখতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।

মাশরাফি সাংবাদিকদের বলেন, মানুষগুলোর চাওয়া পাওয়ার দাবি তুলছেন। এগুলোর মধ্যে কিছু স্বল্পমেয়াদী এবং কিছু দীর্ঘ মেয়াদী যা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করতে হবে। দায়বদ্ধতা থেকেই সবার কথা শুনতে এসেছি, জানাতে এসেছি। আমাদের কথা তো সবাই শোনে, আমরা তো সাধারণ মানুষের কথা কম শুনি। সবার মাঝে এসেছি কারণ আমি যেন সরাসরি তাদের কাছ থেকে সমস্যাগুলো শুনতে পাই।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সিকদার আ. হান্নান রুনু, কালিয়া উপজেলা বাবু কৃষ্ণপদ, লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সজিব রহমান/এফকে