লক্ষ্মীপুরে টাকা-স্বর্ণালংকারের লোভে বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন
লক্ষ্মীপুরে টাকা ও স্বর্ণালংকারের লোভেই বাসায় ঢুকে ব্যবসায়ী আবু ছিদ্দিক (৭৩) ও তার স্ত্রী আতেরুন নেছাকে হত্যা (৬৫) করা হয়। একটি অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (রামগতি সার্কেল) সাইফুল আলম চৌধুরী ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কামরুল হাসান, রুবেল, জুয়েল, কাউছার হোসেন আবুল কাশেম খোকন ওরফে দুদু মিয়া ও বাহার। এর মধ্যে বাহার মাদক মামলায় কক্সবাজার কারাগারে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের কাচারিবাড়ি এলাকায় গ্রেপ্তার হাসানের ইলেকট্রিকের দোকান রয়েছে। তিনি নিজেও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। জুয়েল, বাহার, রুবেল ও কাউছার তার বন্ধু। তারা একসঙ্গেই শাকচর গ্রামের ছইমিঝি বাড়িতে আড্ডা দিতেন। ওই বাড়ির সামনেই একটি একতলা পাকা ভবনে আবু ছিদ্দিক ও তার স্ত্রী আতেরুন নেছা একা বসবাস করতেন। একমাত্র পালক ছেলে আলমগীর তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। এদিকে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে দুদু মিয়া তাদের বাসা থেকে টাকা-স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করেন। এটি তিনি হাসান ও তার বন্ধুদের জানান। ঘটনার কিছু দিন আগেই আবু ছিদ্দিক জমি বিক্রি করেন। দুদু মিয়া সেই তথ্যও তাদের কাছে উপস্থাপন করে।
বিজ্ঞাপন
এরপর অন্যদের না জানিয়েই হাসান, রুবেল ও বাহার রাতের অন্ধকারে দেয়াল টপকে ছিদ্দিকের বাসার ছাদে ওঠে। ছাদের দরজার তালা ভেঙে তারা বাসায় ঢুকে। তখন হাসানের সঙ্গে দুদু মিয়ার কথা হয় মোবাইল ফোনে। এরপরই ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর হাত-মুখ বেঁধে খাটে ফেলে রাখে তারা। এতে ধস্তাধস্তিতে খাট ভেঙে যায়। পরে তারা আলমারি ভেঙে কিছু না পেয়ে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে কোথায় কি আছে? কিন্তু বৃদ্ধ দম্পতির সাড়া শব্দ ছিল না। এতে হাসানসহ তার বন্ধুরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ঘটনাটি নিয়ে পরদিন আলোচনা করলে হাসানসহ তার বন্ধুদের দুদু মিয়া চুপ থাকার পরামর্শ দেন। দুদিন পর ১৮ অক্টোবর রাতে তালাবদ্ধ ঘর থেকে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পরই তারা আত্মগোপনে চলে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী জুয়েল ও কাউছারও টাকার ভাগ চান। এনিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। সেই ঘটনার একটি অডিও রেকর্ড পুলিশের হাতে আসে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৯ জানুয়ারি মধ্যরাতে হাসানকে জেলা শহরের মাদাম ব্রিজ এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে হাসান আদালতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্যে জুয়েল, কাউছার, রুবেল ও দুদু মিয়াকে আটক করা হয়। তাদেরকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি একটি মাদক মামলায় বাহার কক্সবাজারে গ্রেপ্তার হয়। বাহার এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছে। সেখান থেকে আবেদন করে তাকে আনার প্রস্তুতি চলছে। আদালতে তার রিমান্ড চাওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সদর উপজেলার শাকচর গ্রামে গত বছরের ১৮ অক্টোবর মধ্যরাতে তালাবদ্ধ ঘর থেকে অর্ধগলিত আবু ছিদ্দিক ও তার স্ত্রী আতেরুন নেছার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ভাই খোকন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করেন।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর