চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের জাতীয় পার্টির দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক জজ মিয়া। বুধবার (১১ জানুয়ারি) বাদ জোহর উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পুকুরিয়া আশ্রায়ন প্রকল্প মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা এবং বাদ আছর গফরগাঁও সরকারি কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিলাসী কড়ইতলী জামে মসজিদ পাশে দাফন করা হয় জজ মিয়াকে।

এর আগে, ভোরে পুকুরিয়া গ্রামে সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের পালিত মেয়ে নাজুকে ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন এনামুল হক জজ। পরে ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে দুইবার সংসদ সদস্য হন তিনি। তিনি তৃতীয় স্ত্রী রুমার সঙ্গে ১০ বছরের ছেলে নুরে এলাহীকে নিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে বসবাস করতেন। প্রথম স্ত্রী এক মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা হক দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন।

এনামুল হক জজ মিয়া এক সময় ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। সেখান থেকে হন ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য। ছিল প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অঢেল সম্পত্তি। কিন্তু সাবেক দুই স্ত্রী ও তিন মেয়েকে সহায়-সম্পত্তি লিখে দিয়ে তিনি হয়ে যান নিঃস্ব। তারা কেউ খোঁজ না নেওয়ায় তৃতীয় স্ত্রী ও এক শিশু সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছিল তার। 

দূরাবস্থার এমন খবর গণমাধ্যমে উঠে আসলে তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ও ঘর বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানিকভাবে এসবের দলিলপত্র তার হাতে তুলে দেন বর্তমান এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল।

পরদিন ঢাকা পোস্টের এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এনামুল হক জজ মিয়ার সংসদ সদস্য থাকাকালীন অতীত সময়ের কথা। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দাপুটে এমপি ছিলাম, কোনো দিন মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিতাম না। আমি হাজার হাজার লোককে চাকরি দিয়েছি। গফরগাঁওয়ের উন্নয়নে কাজ করেছি। কোনোদিন টাকার লোভ করিনি। কেউ অপরাধ করে আমার কাছ থেকে পার পায়নি।
 
তবে জীবনের এমন কঠিন পরিণতির জন্য নিজের সরলতাকেই দায়ী করেন জজ মিয়া। তিনি বলেন, এমন পরিণতি হবে তা কোনো দিন ভাবতে পারিনি। যাদের সব দিয়েছি তারাই এখন আমাকে বঞ্চিত করেছে। 

জীবন সায়াহ্নে এসে আট বছরের ছেলের ভবিষ্যতের চিন্তা করে এক সময় হেলায় না নেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদটা চেয়েছিলেন জজ মিয়া। 

সেদিন আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কয়েকবার মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সনদটা আমি পাইনি। অনেকের কাছে ধর্না দিলেও মেলেনি সেই সনদ। যদি সনদটি পেতাম তাহলে আমার সন্তানটাকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে পারতাম। 

উবায়দুল হক/এমএএস