সাবেক এমপি এনামুল হক জজ মিয়া

এনামুল হক জজ মিয়া। এক সময় ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। সেখান থেকে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি)। ছিল প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অঢেল সম্পত্তি। কিন্তু সাবেক দুই স্ত্রী ও তিন মেয়েকে সহায়-সম্পত্তি লিখে দিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। তারা কেউ খোঁজ না নেয়ায় তৃতীয় স্ত্রী ও এক শিশু সন্তান নিয়ে এখন তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাড়া বাসায় ছোট্ট একটি কক্ষে থাকেন। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে তার।

সাবেক এমপি এনামুল হক জজ মিয়ার এমন দুরবস্থার কথা জানতে পারেন বর্তমান এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। ফলে এনামুল হক পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ও ঘরের চাবি। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানিকভাবে এসবের দলিলপত্র তার হাতে তুলে দেয়া হয়। 

রোববার (২৪ জানুয়ারি) গফরগাঁও পৌর এলাকায় সাবেক এমপি এনামুল হক জজ মিয়ার ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি কথার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে সাবেক এমপি হিসেবে তাকে সবার সঙ্গে এভাবে না রেখে আলাদা বাড়িতে রাখার আকুতি জানান। 

এনামুল হক  জজ মিয়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাড়ি দিয়েছেন, সেজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার তো থাকার জায়গা হয়েছে। কিন্তু আমার মতো দুইবারের এমপির জন্য এটি খুব বেমানান। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আমার জন্য তিনি একটি আলাদা ঘর দেবেন।

তিনি বলেন, যারা অত্যন্ত অসহায় তাদের জন্য এই বাড়ি ঠিক আছে। কিন্তু আমি তো দুই দুইবারের এমপি ছিলাম। আমার তো সামাজিক মর্যাদা আছে। সেই মর্যাদার আলোকে আমাকে আলাদা একটা বাড়ি দিলে খুশি হব।

এনামুল হক জজ মিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় আরও উঠে এসেছে তার সংসদ সদস্য থাকাকালীন অতীত সময়ের কথা। তিনি বলেন, দাপুটে এমপি ছিলাম, কোনো দিন মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিতাম না। আমি হাজার হাজার লোককে চাকরি দিয়েছি। গফরগাঁওয়ের উন্নয়নে কাজ করেছি। কোনোদিন টাকার লোভ করিনি। কেউ অপরাধ করে আমার কাছ থেকে পার পায়নি।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাওয়া জমির দলিলসহ বাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হয় জজ মিয়াকে 

জীবনের এমন কঠিন পরিণতির জন্য নিজের সরলতাকেই দায়ী করলেন জজ মিয়া। তিনি বলেন, এমন পরিণতি হবে তা কোনো দিন ভাবতে পারিনি। যাদের সব দিয়েছি তারাই এখন আমাকে বঞ্চিত করেছে। 

জীবন সায়াহ্নে এসে আট বছরের ছেলের ভবিষ্যতের চিন্তা করে এক সময় হেলায় না নেয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ এখন চান জজ মিয়া। 

তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কয়েকবার মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সনদটা আমি পাইনি। অনেকের কাছে ধর্না দিলেও মেলেনি সেই সনদ। যদি সনদটি পেতাম তাহলে আমার সন্তানটাকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে পারতাম। 

এনামুল হক জজ মিয়ার ব্যাপারে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, তার দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহযোগিতা করি এবং তার ব্যাপারটা আমরা এমপি মহোদয়কে অবগত করি। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাকে জমি ও ঘর দিয়েছেন। 

আলাদা বাড়ির ব্যাপারে পৌর মেয়র বলেন, এমন কিছু আগে তিনি আমাদের বলেননি। যদি বলেন তাহলে এ ব্যাপারে এমপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে দেখবো তাকে আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায় এবং নতুন কোনো ঘর করে দেয়া যায় কি-না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনীতিতে এনামুল হক জজ মিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার শাসনামলে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য হন জজ মিয়া। বিয়ে করেছিলেন হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের পালিত মেয়ে নাজুকে। 

রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও তার ব্যক্তিজীবন মোটেও গোছানো ছিল না। এক সময় প্রথম স্ত্রী তার কাছ থেকে সহায়-সম্পত্তি লিখে নিয়ে এক মেয়েকে নিয়ে চলে যান আমেরিকায়। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা হকের সঙ্গেও হয় তার বিবাহ বিচ্ছেদ। ঢাকার পুরানা পল্টন ও মিরপুরের কাজীপাড়ায় তার বিশাল দুটি বাড়ি দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই সন্তানকে লিখে দেন। স্থানীয়ভাবে যা ছিল তাও বিক্রি করে দেন তিনি আস্তে আস্তে। সর্বশেষে ১২ শতাংশ জমি একটি মসজিদের নামে লিখে দিয়ে নিঃস্ব হন তিনি। এখন তৃতীয় স্ত্রী রুমা ও আট বছরের ছেলে নুরে এলাহীকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এরশাদের শাসনামলের দাপুটে এই এমপি। 

আরএআর