কাপ্তাই হ্রদে নামলো রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় হাউস বোট ‘দ্য রয়েল অ্যাডভেঞ্চার’। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে শহরের শহীদ মিনার সংলগ্ন পর্যটন সুবিধা সহায়ক অবতরণ ঘাটে এই প্রমোদতরীর উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. শাওয়াল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা প্রমুখ। উদ্বোধন শেষে অতিথিদের নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ করে প্রমোদতরীটি। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বৃষকেতু চাকমা বলেন, রাঙ্গামাটি একটি পর্যটন নগরী। এখানে হ্রদ, পাহাড়, ঝর্ণা একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। হ্রদের বুকে এই ধরনের সুন্দর সুবিধা সম্বলিত একটি হাউস বোট পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য লেকে বেড়ানোর এক দারুণ মাধ্যম তৈরি হলো। 

বিশেষ অতিথি হাজী মো. মুছা মাতব্বর বলেন, আমরা সাধারণত ভিয়েতনাম, চায়না, থাইল্যান্ড এসব দেশে এই ধরনের প্রমোদতরী দেখতে পাই। কিন্তু রাঙ্গামাটিতেও এই ধরনের হাউস বোট চালু হওয়ায় আমি মনে করি আমরাও ধীরে ধীরে স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছি। এই হাউস বোটগুলো পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণ হিসেবে কাজ করবে এবং পাশাপাশি রাঙ্গামাটির পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখবে। 

জানা গেছে, দ্য রয়েল অ্যাডভেঞ্চারে আপাতত ২ দিন ১ রাতের প্যাকেজটি চালু আছে। যেখানে থাকছে ৬ বেলা খাবার, ৪ বেলার নাস্তাসহ রাঙ্গামাটির বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বেড়ানোর সুযোগ। এই প্যাকেজটি নিতে জনপ্রতি খরচ হবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে একদিনের প্যাকেজ। তবে একদিনের প্যাকেজ নিতে হলে সর্বনিম্ন ৪০ জন হতে হবে, জনপ্রতি খরচ হবে ৩ হাজার টাকা। পুরো বোটটি ভাড়া নিতে চাইলে খরচ হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। 

দ্য রয়েল অ্যাডভেঞ্চারের সিইও মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, পর্যটন খাতে কাজ করার মানসিকতা থেকেই আমরা এই হাউস বোটটি তৈরি করেছি। এটি রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় হাউস বোট। আমাদের এখানো মোট আটটি রুম রয়েছে। যার মধ্যে বারান্দাসহ দুটি সুপার প্রিমিয়াম রুম আছে। প্রতিটি রুমের সঙ্গে ওয়াশরুম আছে। প্রতি রুমে চারজন করে থাকা যাবে। আমাদের বোটেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা স্থানীয় এবং ট্রেডিশনাল খাবারগুলো সার্ভ করার চেষ্টা করি। যাতে পর্যটকরা স্থানীয় খাবার সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করতে পারে। 

কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক লাবণী সেন বলেন, বোটটা আসলেই খুব সুন্দর করেছে। বিশেষ করে ছাদে কৃত্রিম ঘাসের কার্পেটে বসে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাছাড়া রুমের ভেতর থেকেও বাইরের ভিউটা খুব সুন্দর। মালদ্বীপের হাউস বোটগুলোর মতোই মনে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা শেফালিকা চাকমা বলেন, রাঙ্গামাটি যেহেতু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ তাই এখানে ন্যাচারাল ভাইভটা থাকা খুব প্রয়োজন, যা এই বোটটিতে আছে। রাঙ্গামাটির অন্যান্য হাউস বোটগুলোতে সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও অনেক বোটে প্রকৃতি উপভোগের সুযোগটা নেই। সেক্ষেত্রে পর্যটক আকর্ষণে অন্যান্য বোটগুলো থেকে রয়েল অ্যাডভেঞ্চার এগিয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। 

রাঙ্গামাটিতে ছোট-বড় অনেকগুলো হাউস বোট রয়েছে। তার মধ্যে এই হাউস বোটটি আয়তনে, সুযোগ-সুবিধায় এবং সৌন্দর্যে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। 

এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিলাসবহুল প্রমোদতরী যা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই লেকে পর্যটক নিয়ে ভ্রমণ করবে। এই প্রমোদতরীর মধ্যে রয়েছে মোট ৮টি রুম, যার প্রতিটি রুমেই আছে অ্যাটাচ ওয়াশরুম। এর মধ্যে দুটি রুম আছে সুপার প্রিমিয়াম যেগুলো ব্যালকনিসহ। প্রতিটি রুমেই চার জন করে লোক থাকতে পারবে। দ্বিতীয়তলায় একটি বড়ো রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে বোটের গেস্টরা খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। বোটের মধ্যেই রান্না করার ব্যবস্থা থাকায় পর্যটকরা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যমতো সময়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। বোটের মধ্যেই রিসোর্টের মতো সুন্দর রুমের ব্যবস্থা থাকায় রুমের ভেতর থেকেই রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখতে পারবেন। আর রাঙ্গামাটির সব পর্যটক স্পট কাপ্তাই লেকের তীরে হওয়ায় ওই বোটে করেই স্পটগুলো ঘুরতে পারবেন পর্যটকরা। রাত্রীযাপনের সুবিধা থাকায় কোনো পর্যটককে আলাদাভাবে রিসোর্ট নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এক বোটের মধ্যেই থাকা, খাওয়া এবং ঘোরার সব সুযোগ সুবিধা পাবেন পর্যটকরা। 

মিশু মল্লিক/আরএআর