৭ মাস ধরে অন্ধকারে চলছে তাদের জীবন
৭ মাস ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় নষ্ট পড়ে আছে ফ্রিজ
ভোলা সদরের মাঝেরচর ও দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ মদনপুরে গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো এখনো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না সেখানকার স্থানীয়রা।
মুজিববর্ষ ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয় ভোলার সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝেরচর ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে। কিন্তু এর মাত্র ৬ মাসের মাথায় আবার অন্ধকারে ডুবে যায় মাঝেরচর ও মদনপুরবাসীদের জীবন। গত ৭ মাসেও বিদ্যুৎ সচল না হওয়ায় হতাশ এবং ক্ষুব্ধ এখানকার মানুষ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সাবমেরিন ক্যাবলে ত্রুটির কারণেই এমন সমস্যা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মাঝেরচর ও মদনপুরে স্থানীয়দের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে মহিষের দুধ থেকে দই ও মিষ্টির ছানা তৈরি করা। এসব দুগ্ধজাত পণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু টানা ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে মদনপুরে বিদুৎ না থাকায় এসব ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফ্রিজ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ওষুধ বিক্রেতাসহ গৃহিণীরাও। মোমবাতির আলোতে পড়তে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েও চিন্তার শেষ নেই অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের।
বিজ্ঞাপন
চরের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, গত বছরের জুন মাসে আমাদের বিদ্যুৎ এর সমস্যা শুরু হয়। এখনো পর্যন্ত ঠিক হয়নি। কবে ঠিক হবে সেটাও জানি না। বিদ্যুৎ পাওয়ায় আমরা মনে করেছিলাম চরের অনেক উন্নয়ন হবে। কিন্তু আমরা এখনো সেই আগের মতো অন্ধকারেই আছি।
শরিফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, বিদ্যুৎ আসার পর বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে টিভি-ফ্রিজের ব্যবসা শুরু করি। বিদ্যুতের সমস্যা হওয়ার কারণে আমার দোকানের সব টিভি ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যবসায়িকভাবে আমি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
স্থানীয় দই ব্যবসায়ী শামসুদ্দিন বলেন, এই চর থেকে মহিষের দুধ কিনে দই বানিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতাম। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজ বন্ধ, তাই ব্যবসা করতে পারছি না। এ কারণে অনেক বেশি লোকসানের মুখে পড়েছি।
আমেনা বেগম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের ঘরের টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, লাইট যা আছে সব নষ্ট হয়ে গেছে। বাচ্চারা ঠিক মতো লেখাপড়া করতে পারে না। পরীক্ষায় কিভাবে অংশগ্রহণ করবে সেটা নিয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন নান্নু জানান, এ সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বললেও তারা বিষয়টি সমাধান করছেন না। শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, ভোলার মেঘনা নদীতে দৈনিক ৪ থেকে ৫শ জাহাজ আসা-যাওয়া করে। কোনো একটি জাহাজ নোঙর করার সময় হয়তো সাবমেরিন ক্যাবেলটি কেটে ফেলেছে। যে কারণে জুন মাসের ২৩ তারিখ থেকে মদনপুরে বিদ্যুৎ বিছিন্ন রয়েছে।
ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলতাফ হোসেন বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছি। এখনো আর্থিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি। আর্থিক অনুমোদন পাওয়া গেলেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
আরকে