লক্ষ্মীপুরে কাতার প্রবাসীর মরদেহ আটকে রেখে খালি স্ট্যাম্পে তার স্ত্রীর স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে জেলার সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন কাজলসহ ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে ওই প্রবাসীর স্ত্রী নাজমা আক্তার নাছু বাদী হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন কাজল সদর (পূর্ব) থানা বিএনপির সদস্য ও উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের আদিলপুর গ্রামের বাসিন্দা। অন্য আসামিরা হলেন- আলতাফ হোসেন, মহিব উল্যা ও কাজী আরিফ হোসেন।

বাদীর আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, আদালতের বিচারক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়েছেন। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি স্ট্যাম্প উদ্ধার করে আদালতে দাখিল করার জন্য সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাজমা আক্তার নাছু লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর এলাকার মৃত মো. বেল্লাল হোসেনের স্ত্রী। বেল্লাল হোসেন ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কাতারে মারা যান। পরে ৫ ডিসেম্বর তার মরদেহ দেশে আনা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের সঙ্গে বাদীর স্বামী বেল্লালের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। পরে ব্যবসা নিয়ে তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। এরপর বেল্লাল কাতারে চাকরির উদ্দেশ্যে চলে যান। সেখানে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মরদেহ দেশে আনা হলে টাকা টাকা পাওয়ার কথা বলে দাফনে বাধা দেয় অভিযুক্তরা। কোনোভাবেই তারা মরদেহ দাফন করতে দিচ্ছিল না। একপর্যায়ে বাদী বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকার খালি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দেন। পরে এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে হিসাব করে দেখা যায়, তারা কোনো টাকা পাবে না। উল্টো তাদের কাছে বেল্লাল ৪১ লাখ টাকা পাবেন। তখন এক সপ্তাহের মধ্যে টাকাসহ স্বাক্ষর নেওয়া খালি স্ট্যাম্প ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এক মাস পার হয়ে গেলেও তারা স্ট্যাম্প ও টাকা দেইনি। উল্টো তারা খালি স্ট্যাম্প দিয়ে বাদীকে মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে হয়রানি করছে।

নাজমা আক্তার নাছু বলেন, আমার স্বামীর মরদেহ দাফনের জন্য সকল প্রস্তুতি নিলে অভিযুক্তরা ৩-৪ ঘণ্টা আটকে রাখে। তখন আমি বাধ্য হয়ে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করি। পরে বৈঠকে বসে হিসাব করে দেখি আমার স্বামী অভিযুক্তদের কাছ থেকে ৪১ লাখ টাকা পাবে। ওই টাকাসহ স্ট্যাম্প ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দিচ্ছে না। উল্টো স্ট্যাম্প দিয়ে তারা আমাকে ফাঁসানোর পাঁয়তারা করছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

তবে বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন কাজল বলেন, বেল্লাল আমার ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে টাকা ধার নেন। ওই টাকা পরিশোধ না করেই তিনি বিদেশ গিয়ে মারা যান। পরে পাওনাদাররা তার মরদেহ আটকে রাখে। পরে লিখিত স্ট্যাম্পে তার স্ত্রীর স্বাক্ষর নিয়েছিলাম। এ নিয়ে প্রথমে সদর মডেল থানায় পরে এসপি অফিসে বৈঠক হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আদালতের আদেশের কপি আমাদের কাছে এখনো পৌঁছায়নি। আদেশের কপি হাতে পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমজেইউ