ওষুধি ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত চিয়া সিড চাষ হচ্ছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মাটিতে। দানাদার এ ফসল মানবদেহের বিভিন্ন রোগের কার্যকরী মহৌষধ হিসেবে কাজ করায় এর চাষাবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে এটি চাষাবাদ করে লাভের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।

সিরাজগঞ্জের মাটিতে চাষাবাদ হচ্ছে মেক্সিকোর চিয়া সিড। এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন উল্লাপাড়ার কয়ড়া সরাতলা গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে ফার্মাসিস্ট মো. গোলাম হোসেন। শখের বসে তিনি গত বছর ২৫ শতক জমিতে ম্যাস্টো কোম্পানির চিয়া সীডের চাষাবাদ শুরু করেন।

প্রথম বছরেই প্রায় ১৩৫ কেজি বীজ পান। বিক্রি শেষে ৪০ কেজি বীজ তিনি চাষাবাদের জন্য রাখেন। কিন্তু সেই বীজে চাষাবাদে ভালো ফলন মেলেনি। তবে তিনি হাল ছেড়ে দেননি। চলতি বছর বিদেশ থেকে চাষাবাদের জন্য তিনি ৯০ কেজি মেক্সিক্যান হাইব্রীড চিয়া সিড আমদানি করেন। এই বীজ তিনি জেলার উল্লাপাড়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, রংপুর সদর, শরিয়তপুরের জাজিরার কৃষকের মাধ্যমে ১৭০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করিয়েছেন।

চিয়া সিড ক্ষেত

জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া সরাতলা, রতদিয়ার, হরিশপুর গ্রামের মাঠে চিয়া সিড চাষাবাদের উদ্যোক্তা গোলাম হোসেন ২১ বিঘা, সাবেক ইউপি সদস্য ঠান্ডু মিয়া তার ২৯ বিঘা, হেলাল উদ্দিন ৩ বিঘা জমিতে এর চাষাবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে এসব জমিতে চিয়া সিডের গাছ বড় হয়ে ফুল ও ফল ধরেছে। লম্বা আকৃতির চিয়া সিডের গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। প্রতিটি গাছের সাথে অসংখ্য ফুল ও ফল ধরেছে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চিয়া চাষে উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরু ভূমি দেশে চিয়া সিডের চাষাবাদ হয়। এতে রয়েছে ওমেগা-৩, ফাইবার, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটসহ পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন-বি, থায়ামিন, নিয়াসিন, আয়রণ, দস্তা, ফ্যাটিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম। নানা উপায়ে এ বীজ খাওয়া যায়। এতে মানুষের শারীরিক অনেক রোগ দূর হয়। প্রচার-প্রচারণা ও চাহিদার কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বাজারে প্রকারভেদে ১৩শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে চিয়া সিড বিক্রি হচ্ছে। যা বিদেশে থেকে আমাদানি করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময়ী এ চাষাবাদ দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে আমদানি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কৃষকরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

চিয়া সিড

উদ্যোক্তা মো. গোলাম হোসেন বলেন, প্রথম বছরে প্রায় ১৩৫ কেজি বীজ পাই। এর মধ্যে ৪০ কেজি রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেই। কিন্তু সেই বীজে ফলন ভালো না হওয়ায় এবার দেশের বাইরে থেকে ৯০ কেজি মেক্সিক্যান হাইব্রীড চিয়া সিড বীজ আমদানি করি। এই বীজ এবার সিরাজগঞ্জ ছাড়াও জেলার বাইরেও কয়েকটি জায়গায় বপন করেছি। আশা করছি এবার ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এটা এখনও অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। তবে আগামীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নে প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে চিয়া সিড চাষাবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা এই চাষাবাদে সার্বক্ষণিক মনিটরিংসহ কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি। এ বীজের অনেক দাম। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠে গাছের ফুল ও ফল ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি এ চাষাবাদে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন।

শুভ কুমার ঘোষ/আরকে