বাপু খুবে ঠান্ডা লাগেছে। মোর ঘরত তো লেপ নাই। খালি একখান কেথা আর দুইডা কম্বল। ঠান্ডা যায় না। ঠান্ডাত রাতত ঘুম ধরে না। আইজ একটা লেপ দিল। এলা আর ঠান্ডা লাগিবেনি। ভালো করে ঘুমাবা পারিম। শীতবস্ত্র হিসেবে লেপ পেয়ে খুশি হয়ে এভাবেই বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ছোট খোঁচাবাড়ি এলাকার কুসুম মন্ডল (৬৫)।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে সহায়’র (জুলুম বস্তির) উদ্দোগ্যে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (বড়) মাঠ প্রাঙ্গনে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ৩০০ শতাধিক অসহায় দরিদ্রদের মাঝে লেপ বিতরণ করেছে সংগঠনটি।

কুসুম মন্ডল আরও বলেন, টাকা নাই এজন্য লেপ কিনিবা পারুনি। আশা ছিল যে একটা লেপ কিনিম। সাধ থাকিলেও সাধ্য ছিলনি। আইজ মুই খুবে খুশি। আল্লাহ উমার ভালো করুক। 

এছাড়াও মন্ডলপাড়ার ফাতেমা নামে এক বৃদ্ধা বলেন, হামার এইদিক যে ঠান্ডা। ঠান্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে রাতে ঠিকমতো ঘুমাবাও পারু না। আজই একটা লেপ দিছে মোক। এলা শান্তিত একটু ঘুমবা পারিম।

নিশ্চিতপুরের জুলেখা বলেন, গতবারও এরা লেপ দিয়েছিল কিন্তু আমি আসতে না পারাই লেপ নিতে পারিনি। এবার এসে লেপ পেলাম। খুব ভালো লাগছে। এমন করে যদি অন্যরাও এগিয়ে আসে গরিবদের জন্য তাহলে শীতে আমাদের মতো মানুষদের কষ্ট কমে যাবে।

সহায় সংগঠনের সভাপতি সুজন খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন দরিদ্র শীতার্তদের হাতে লেপ তুলে দেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আলম টুলু, সমাজসেবক ও চিকিৎসক ডা. শুভেন্দু কুমার দেবনাথ, সহায় সংগঠনের সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান বকুল, সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন সাগর প্রমুখ।

ঠাকুরগাঁওয়ের একঝাঁক তরুণ-তরুণী নিয়ে গঠিত সামাজিক সংগঠন সহায়’র (জুলুম বস্তি) পথ চলা শুরু হয় ২০১৮ সালে। জন্মলগ্ন থেকেই সংগঠনটি অসহায় দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্নভাবে মানুষদের সহযোগিতা করছে। 

সকলের সহযোগিতায় যেকোনো সময় আমরা গরিব দুঃখীদের পাশে দাঁড়িয়েছি ও আগামীতে থাকবো বলে জানান, সহায় সংগঠনের সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান বকুল।

সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন সাগর বলেন, করোনাকালে ভর্তূকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য, বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ, ৫ টাকায় হাজারো মানুষকে ঈদ বাজার, শীতের সময় লেপ বিতরণসহ গরিব দুঃখীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছি‌। সকলের সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরও বেশি পরিসরে পাশে থাকতে পারবো।

প্রধান অতিথি ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বলের পরিবর্তে লেপ বিতরণ, এটি আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। এ রকম ঘটনা আসলে খুব কম দেখা যায়। আমরা সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সংগঠনটির  প্রতিটি ভালো কাজে জেলা পুলিশ পাশে থাকবে। 

এম এ সামাদ/এমএএস