কর্দমাক্ত রাস্তায় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা

মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়ন থেকে শ্যাকপুর বাজার পর্যন্ত গতকাল শনিবার (১৩ মার্চ) ১৫-২০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকেই বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। তবে প্রাণহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার বিকেলে ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। এতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে কমপক্ষে ১৫-২০টি যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। প্রতিবছরই এ সড়কে শত শত দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

জানা গেছে, সদর উপজেলার ছিলারচর থেকে শ্যাকপুর বাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এ সড়ক দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মাটি পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ লরি-ট্রাক্টর। সেই লরি-ট্রাক্টরে আবার বহন করা হচ্ছে অতিরিক্ত মাটি। লরি থেকে মাটি পড়ছে সড়কে। এতে সামান্য বৃষ্টি বা পানি পড়লেই কর্দমাক্ত হয়ে পড়ছে রাস্তাটি।

সদর উপজেলার ছিলারচর বাজার থেকে শ্যাকপুর বাজার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কের দুই পাশে রয়েছে আল মদিনা, জিয়া ২, পদ্মা ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ইটভাটা। দীর্ঘদিন ধরে এসকল ভাটার মালিকরা অবৈধ লরি-ট্রাক্টরে করে মাটি পরিবহনে সড়কটি ব্যবহার করে আসছে। মাটি নেওয়ার সময় লরি থেকে সেই মাটি পড়ছে রাস্তায়। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এতে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে সড়কটি।

শনিবার (১৩ মার্চ) ঢাকা পোস্টের মাদারীপুর প্রতিনিধিসহ আরও ছয়জন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের জন্য মাদারীপুরের শিবচরে যান। মাদারীপুর সদরে ফেরার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্লিপ কেটে তাদের দুইটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে তারা আঘাতপ্রাপ্ত হন।  এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা একটি ক্যামেরা হারিয়ে যায় এবং আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের উপস্থিতিতে ঘটে আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা।

এ সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় স্লিপ কেটে পড়ে যান এক মোটরসাইকেল আরোহী। তিনি বলেন, আমি ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। রাস্তায় কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখানে আসার পর রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় পড়ে যাই। এতে আমার মোটরসাকেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফোন কাদায় পড়ায় নষ্ট হয়ে যায়। শুনেছি লরিতে করে ইটভাটায় মাটি নেওয়ার ফলে এমন হয়েছে। এর একটা প্রতিকার হওয়া দরকার।

স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর মিয়া বলেন, আজ বৃষ্টির পর থেকে ১৫ থেকে ২০টির মতো দুর্ঘটনা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কেউ কেউ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। প্রতিবছরই এখানে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা এলাকাবাসী অনেকবার বলেছি। এর একটি প্রতিকার হওয়া দরকার।

ছিলারচর এলাকার বাসিন্দা মেহেদি হাসান বলেন, প্রতিবছর এখানে মাহিন্দ্রাই করে মাটি কাটা হয়। এর ফলে হালকা বৃষ্টি হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। 

বিষয়টি জানতে আল মদিনা ব্রিকস এ গেলে মালিক জয়নালকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তিনি জানান, আপনারা  আসছেন ভালো হয়েছে। এখন চা নাস্তা খান। আমার ম্যানেজার আপনাদের সম্মানী দিয়ে দিবে, নিয়ে আপনারা চলে যান।

মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমাদের আঙ্গুলকাটা ফাঁড়ির তদন্ত অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। আর ইটভাটায় মাটি নেওয়ার কারণে রাস্তা খারাপ হয়ে যদি দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার দায় ইটভাটার মালিকের। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি নোট রাখছি। এ ব্যাপারে রোববার ব্যবস্থা নেব।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুন বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি।

নাজমুল মোড়ল/এসপি