সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলকে হত্যার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি তার পরিবার। এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরাও। 

শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা জানান, শিমুল হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও নানা জটিলতা এবং কূটকৌশলে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া তো দূরের কথা বিচারকাজই শুরুই হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরের মণিরামপুরে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন চিকিৎসার জন্য প্রথমে শিমুলকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য শিমুলকে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। 

পরে নিহত শিমুলের স্ত্রী নুরুন নাহার বাদী হয়ে মেয়র হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে শাহজাদপুর থানায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে মেয়র মিরুসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। বর্তমানে সব আসামি জামিনে রয়েছেন।

নিহত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের স্ত্রী নুরুন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিমুল হত্যার ৬ বছর পার হলেও এখনো বিচার হলো না। করোনার কারণে বিচার কার্যক্রম থেমে গেছে। তারপর আর শুরুই হয়নি। সমকাল অফিস থেকে লোক এসেছিল, তারা আমাকে বলেছেন- খুব দ্রুতই বিচারকাজ শুরু করতে তারা সহযোগিতা করবেন। 

তিনি আরও বলেন, স্বামীকে হারিয়ে পরিবারের স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেছে। বিচার না হওয়ায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। আমি বগুড়াতে থেকে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। ছেলে মেয়েরাও বড় হচ্ছে। আমার বাড়িতে একটা থাকার ঘর পর্যন্ত নেই। আমি সবার কাছে একটি থাকার ঘরের জন্য প্রার্থনা করছি। আপনারা যদি আমাকে একটা ঘর করে দিতেন তাহলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো। 

এদিকে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজাদপুরের কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ ও শিমুলের পরিবারের সদস্যরা।

সকালে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় আব্দুল হাকিম শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

এরপর শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব থেকে শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ, সংস্কৃতিকর্মী এবং নিহত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের স্বজনদের নিয়ে একটি শোক র‌্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার প্রেস ক্লাব চত্বরে ফিরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়।

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিমল কুমার কুন্ডুর সভাপতিতে এবং সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক আহমেদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনুস। 

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান পিন্টু, শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম, সহ-সভাপতি এমএ জাফর লিটন, বিআরডিবির চেয়ারম্যান ভিপি লুৎফর রহমান, সাংবাদিক শফিউল হাসান চৌধুরী লাইফ, আতিকুল ইসলাম, কল্যাণ ভৌমিক প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন, সাংবাদিক শিমুল হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও নানা জটিলতা এবং কূটকৌশলে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া তো দূরের কথা বিচারকাজই শুরু হয়নি। এ হত্যা মামলার সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে অবিলম্বে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জোর দাবি জানান তারা। 

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন নাহার, ছেলে আল নোমান নাজ্জাশি সাদিক, মেয়ে তামান্না-ই-ফাতেমা, সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি কোরবান আলী লাবলু, সাংবাদিক মুমীদুজ্জামান জাহান, এম এ জাফর লিটন, ওমর ফারুক, শামছুর রহমান শিশির, জহুরুল ইসলাম, জাকারিয়া মাহমুদ, জেলহক হোসাইন, আব্দুল কদ্দুস, শাফিকুল ইসলাম পলাশ, নয়ন আলী, আরিফুল ইসলাম, মিলন মাহফুজ, জাহিদ হাসান, মীর্জা হুমায়ন প্রমুখ।

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর