বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে না কেন? এতো টাকা গেল কোথায়? যদি চুরি না করে থাকেন তাহলে সংসদে আইন পাস করলেন কেন? চুরি করছেন, সেই চোরের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না।

তিনি বলেন, সংবিধান জনগণের জন্য, সংবিধান দেশের জন্য, সংবিধান কোনো চোরের জন্য না। সংবিধান কোনো লুটেরার জন্য না। এজন্য বলেছি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশের মঙ্গলের জন্য আমরা সংবিধান পরিবর্তন করব। পুরোটা না করি, কিছু কিছু আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেসিসি মার্কেটের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে যেই নামেই বলেন একটা সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকার একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। তারপর একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

তিনি বলেন, এই যে আমরা শান্তিপূর্ণ মিটিং করছি। আরেকটা শান্তি মিটিংয়ের নাম সৃষ্টি করে যার যার মিটিং করতেই পারেন, কোনো অসুবিধা নেই। ওই সব মিটিং করতে পুলিশের পারমিশন লাগে না। বরং কিছু কিছু লোক বসে পাহারা দেয় তাদের মিটিংয়ে যেন কোনো ঝামেলা না হয়। আর যত সমস্যা আমাদের। আমরা এ দেশের নাগরিক না? দেশটা কি আওয়ামী লীগের নাকি এ দেশের জনগণের? জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাদের ক্ষমতা থেকে নামানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সাংবিধানিক দায়িত্ব, নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের কর্তব্য। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক।

সমাবেশ মঞ্চ থেকে তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ক্ষমতা ছাড়া তারা কিছু ভাবতে পারে না। ক্ষমতার জন্য তারা জন্মেছে, ক্ষমতার জন্য মরবে। আমরা যদি ঘুরে দাঁড়াই, তারা বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। ১৪ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন আপনারা। এই সরকারের সময় বেশি নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার দেশের প্রতি দরদ নেই। এই সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিনের ভোট রাতে কাটছে। খালেদা জিয়াসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি চাইলে আন্দোলন করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অর্থনীতি ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম করতে হবে। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেদী আহমেদ রুমী, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ তথ্য গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, যশোর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাহারুজ্জামান মোর্তজা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি আলাউদ্দীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সাবিরুল হক সাবু প্রমুখ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু ও মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন।

এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় কেসিসি মার্কেটের সামনে এই সমাবেশ শুরু হয়। সকাল থেকে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। বেলা ১১টা থেকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করেন। এরপর বেলা সোয়া ১২টার দিকে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। জেলা ওলামা দল সভাপতি মাওলানা ফারুক হোসেন সমাবেশে কোরআন তেলাওয়াত করেন।

মোহাম্মদ মিলন/এসএসএইচ/