গত ১৮ বছরে রংপুর জেলা থেকে প্রায় ৩৮ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১০ সালের বিদেশে গেছেন ৮ হাজার ৩৩ জন এবং ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গেছেন ২৩ হাজার ৫৮৬ জন। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় অভিবাসী শ্রমিক মাত্র এক দশমিক ৮ শতাংশ। সেখান থেকে রেমিট্যান্স আসে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ অবস্থায় রংপুর থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে নানামুখী কার্যক্রম চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরে আরডিআরএস বাংলাদেশ ভবনের রোকেয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‌‘নিরাপদ অভিবাসন এবং দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

তারা বলছেন, প্রচার-প্রচারণা ও দক্ষ শ্রমিকের অভাবের পাশাপাশি উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনগ্রসর এই অঞ্চলটিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। তবে সরকারি উদ্যোগ এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের কারণে দিন দিন বিদেশ যেতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) উৎপল কুমার রায় প্রমুখ। মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপন করেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমেনা পারভীন। সেমিনার সঞ্চালনা ও পরিচালনা করেন উইনরক ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী খাইরুল ইসলাম।

সেমিনারের আলোচনা পর্বে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান এবং রেমিট্যান্সে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। তারা মনে করেন, প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, তথ্য ঘাটতি ও দালালদের দৌরাত্ম্য দূর করা গেলে রেমিট্যান্স বাড়ানো সম্ভব।

এ সময় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমেনা পারভীন জানান, ২০০৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১৮ বছরে রংপুর জেলা থেকে সাড়ে ৩৭ হাজার শ্রমিক অভিবাসী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১০ সালে বিদেশে গেছেন ৮ হাজার ৩৩ জন এবং ২০১১ থেকে ২০২২ সালে গেছেন ২৩ হাজার ৫৮৬ জন।

করোনার সময় ২০২০ সালে মাত্র ৪৭৩ জন অভিবাসী শ্রমিক রংপুর থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। করোনা মহামারির সময় অভিবাসী শ্রমিকরা ঘরমুখী হলেও এখন নতুন করে বিদেশমুখী হতে শুরু করেছেন। ২০২১ সালে ১ হাজার ৬২২ জন আর ২০২২ সালে ৩ হাজার ৮৬৯ জন শ্রমিক গেছেন বিদেশে।

নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে নানামুখী কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন রংপুর কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আমেনা পারভীন। তিনি বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে দালালদের দৌরাত্ম্য কমানোর পাশাপাশি নিরাপদ, নৈতিক ও মর্যাদাপূর্ণ শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যই আমরা কাজ করছি।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিদেশগামী এক ব্যক্তি বলেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষ অনেক আগে থেকেই বিদেশ যাওয়া নিয়ে আগ্রহী ছিল না। তবে এখন অনেকের কাছে শুনে ও খবর নিয়ে যাচ্ছে। কারণ সুযোগ-সুবিধা ভালো। আমরা দেশে যে শ্রম দেই, সেই তুলনায় মূল্য পাই না। তবে বিদেশে শ্রমের মূল্য ভালো। তাই সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি কর্মসংস্থানের সঠিক তথ্য প্রদান ও দালাল প্রতিরোধ করা যায়, তাহলে রংপুর থেকে আরও বেশি লোক যেতে আগ্রহী হবে।

‌‘থাকবো ভালো, রাখবো ভালো দেশ, বৈধ পথে প্রবাসী আয়-গড়বো বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৈদেশিক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং রংপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় এই সেমিনারের আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা উইনরক ইন্টারন্যাশনালের ইউএসএইডস ফাইট স্লেভারি  অ্যান্ড ট্রাফিকিং-ইন পারসনস (এফএসটিআইপি) অ্যাকটিভিটি এবং আরডিআরএস বাংলাদেশ এই সেমিনার আয়োজনে কারিগরি সহযোগিতা করে।

সেমিনারে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, রিক্রুটিং এজেন্সি, পিয়ার লিডার, অনির্বাণ, বিদেশফেরত ও বিদেশগামী কর্মীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর