বগুড়ার দুই আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যাওয়া আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে হবিগঞ্জের স্কুলশিক্ষক এম মুখলিছুর রহমানের দেওয়া গাড়ি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। টয়োটা নোয়াহ ১৯৯৮ মডেলের ওই গাড়িটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ প্রায় ১০ বছর আগে শেষ হয়েছে। বর্তমানে গাড়িটির ১০ বছরের বকেয়া হিসাবে সরকারি ফি দিতে হবে প্রায় চার লাখ টাকা। 

স্কুলশিক্ষক এম মুখলিছুর রহমানের বাড়ি হ‌বিগ‌ঞ্জের চুনারুঘাট উপ‌জেলার নরপ‌তি গ্রামে। তিনি চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের হাজি আবদুল জব্বার জিএল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

তার ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে এম মুখলিছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে, তা নিয়ে তো এতো কথা হয় না।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৮ মার্চে সর্বশেষ গাড়িটির ট্যাক্স প্রদান করা হয়। একই বছরের ১৫ জুলাই গাড়ির ফিটনেস সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে গাড়িটির ১০ বছরের বকেয়া হিসাবে সরকারি ফি দিতে হবে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। বিগত ১০ বছর ওই শিক্ষক গাড়িটি অবৈধভাবে ব্যবহার করেছিলেন। 

গতকাল মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের নরপতি গ্রামে স্কুলশিক্ষক এম মুখলিছুর রহমানের বাড়িতে এসে উপহারের গাড়িটি গ্রহণ করেন হিরো আলম। তিনি গাড়িটি মানবসেবায় ব্যবহারের ঘোষণা দেন।

হবিগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলাচল করলে পুলিশ আটকে মামলা দিতে পারে। যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক করে তাহলে জরিমানা করা হবে। 

হিরো আলমের নেওয়া গাড়িটির ফিটনেসের কাগজপত্র হালনাগাদে কত টাকা লাগতে পারে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, আমি আগামীকাল বৃহস্পতিবার অফিসে গিয়ে সুনির্দিষ্ট টাকার পরিমাণ বলতে পারব। এই মুহূর্তে ছুটিতে রয়েছি। 

তবে শিক্ষক মুখলিছুর রহমান আলোচিত হিরো আলমকে যে মাইক্রোবাস উপহার দিয়েছেন সেই গাড়ির কাগজপত্র নবায়ন করতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ফি দিতে হবে বলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে।

ফিটনেসের কাগজ ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চলাচল করাকে অবৈধ বলেন হবিগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মোহাম্মদ আলী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাড়ির কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় চালানো কোনো সুনাগরিকের উচিত হবে না। রাস্তায় এ ধরনের গাড়ি পেলে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ১১৫ ধারা অনুযায়ী আটক করা হবে। সেই সঙ্গে দুই মাসের মধ্যে
কাগজ হালনাগাদ করার সুযোগ দেওয়া হয়। যদি তা না করা হয়, তবে গাড়ি রিক্যুজিশন করা হবে।

এ বিষয়ে এম মখলিছুর রহমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হিরো আলমের সঙ্গে আজ সকালে আমার কথা হয়েছে। গাড়িটি তিনি চালিয়ে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। 

গাড়ির ফিটনেস ছাড়া হিরো আলম গাড়িটি কীভাবে চালাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মখলিছুর রহমাম বলেন, জনতার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কাগজপত্র লাগবে না। আর দেশে যে হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে, তা নিয়ে তো এতো কথা হয় না।

এ বিষয়ে কথা বলতে হিরো আলমের ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। 

হিরো আলমের উপহার গ্রহণ অনুষ্ঠানের সভাপতি চুনারুঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাউছার আহমেদ বাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাড়িটি হিরো আলম সাহেব তার এলাকায় নিয়ে গেছেন। তবে আমরা মনে করেছিলাম, গাড়িটি হয়তো তিনি আমাদের এলাকার জন্য দিয়ে যাবেন।

আজহারুল মুরাদ/আরএআর