একুশে পদক পাচ্ছেন পাকুন্দিয়ার গোলাপ মিঞা
ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন কিশোরগঞ্জ-১ (পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হক (গোলাপ মিঞা)।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হকসহ (গোলাপ মিঞা) ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক-২০২৩ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বাবুল মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হক (গোলাপ মিঞা) ১৯৪০ সালের ৪ মার্চ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী সিরাজুল হক ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। মা আমেনা বেগম ছিলেন গৃহিণী।
ভাষাসৈনিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম একেএম শামছুল হক (গোলাপ মিঞা) কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সততা, কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি অপরিসীম মমত্ববোধের গুণে গুণান্বিত এই রাজনীতিবিদ কিশোরগঞ্জ তথা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক আলোচিত নাম।
বিজ্ঞাপন
গোলাপ মিঞার স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে ময়মনসিংহ ও ঢাকায়। ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের একজন কৃতী ছাত্র ছিলেন তিনি। ময়মনসিংহে অবস্থানকালেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় সমগ্র কিশোরগঞ্জে ব্যাপক গণসংযোগ করেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে তিনি পুনরায় কারাভোগ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সাহসিকতা, মোহনীয় ব্যক্তিত্ব, সুদূরপ্রসারী কল্পনাশক্তি, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাভোগ করেন। ১৯৬৯ সালে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন গোলাপ মিঞা। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-২৬ আসন থেকে সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
তিনি একজন সংগঠক হিসেবে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। ৩নং সেক্টরে রাজনৈতিক সমন্বয়কারী ও মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিংয়ের দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন গোলাপ মিঞা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অসামান্য ভূমিকা পালন করেন গোলাপ মিঞা।
১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ-১ (পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পরপর তিন বার মাল্টিপারপাস বহুমুখী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। যার অবদান স্বরূপ জাতীয় সমবায় পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। উনাকে কিশোরগঞ্জ জেলার সমবায় আন্দোলনের পুরোধা বলা হয়ে থাকে।
তিনি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন গোলাপ মিঞা।
গোলাপ মিঞা ১৯৯৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্যের দায়িত্বে থাকাকালীন ঢাকাস্থ গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তার ছেলে একেএম দীদারুল হক একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী।
এসকে রাসেল/এমজেইউ