পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ বাগান পরিদর্শন করলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসান ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডাচ নাগরিক আর্নো হ্যামেলিয়ার্স। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় বাহারি রঙের টিউলিপ বাগান পরিদর্শন করেন তারা। তাদেরকে টিউলিপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন ফুলচাষি নারীরা।

বাংলাদেশের মতো দেশে সীমান্ত অঞ্চলে এ রকম নেদারল্যান্ডসের নান্দনিক টিউলিপ ফুলের চাষ হতে দেখে অভিভূত হন তারা। এ সময় তারা এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০ নারীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে ইএসডিও ও পিকেএসএপের উদ্যোগ পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসান ও ড. আর্নো হ্যামেলিয়ার্স।

ডাচ রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসান বলেন, বাংলাদেশের মতো জায়গায় এখানে টিউলিপের চাষ হচ্ছে দেখে আমি খুবই আনন্দিত। বিশেষত এ ফুলগুলো শীত প্রধান দেশগুলোতে হয়ে থাকে। সেখানে বাংলাদেশের মতো এক সীমান্ত এলাকায় যারা এই ফুল চাষ করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তারা যেন একতাবদ্ধ থাকে, যাতে তারা এ কাজ আরও ছড়িয়ে দিতে পারেন। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবেন। বিশেষ করে পিকেএসএফ ও ইএসডিওকে এ ফুল চাষের উদ্যোগ গ্রহণে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।

আর্নো হ্যামেলিয়ার্স বলেন, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় টিউলিপের বাগানে এসে খুব অভিভূত হয়েছি। যেন আমার নিজের দেশের চিত্র দেখতে পাচ্ছি। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে। এ সময় তিনি এখানে টিউলিপ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদেরকে একত্রে থেকে কাজ করতে বলেন। 

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (কার্যক্রম)  ড. আকন্দ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু ঋণ দিয়ে দারিদ্র বিমোচন হয় না। বোধগম্যতা থেকে দারিদ্র্য মোচনে যে নানা অনুষজ্ঞ রয়েছে, তার মধ্যে আমরা এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ এনে টিউলিপ চাষ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে এ অঞ্চলে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা নেমে আসে ৭-৮ ডিগ্রিতে। বাইরের দেশে যে তাপমাত্রায় এ ফুল ফোটে, সেখানে আমাদের এখানেও তো একই তাপমাত্রা থাকে। তাই আমরা এখানে ইএসডিও’র মাধ্যমে টিউলিপ চাষ শুরু করি। এ থেকে আমরা সাফল্য পেয়েছি, অন্যদিকে ইকো ট্যুরিজম যে তৈরি হয়েছে। এখানে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার পর এখন টিউলিপের সৌন্দর্য যুক্ত হয়েছে। আমরা আগামীতে আরও বড় আকারে করার পরিকল্পনা করেছি।

ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. শহীদ উজ্জামান বলেন, বিশেষত ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে আমরা ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) সহযোগিতায় সীমান্ত গ্রাম দর্জিপাড়ায় নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ ফুল চাষের পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আমরা বাণিজ্যিকভাবে ২০ জন কৃষাণীর হাতে ১০ প্রজাতির বাহারি রঙের নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ ফুটিয়েছি। এসব ফুলের সৌন্দর্য দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনার্থীদের। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসে টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ ফুল কিনছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেরিয়েল জিমার মেন, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) কনসালটেন্ট  মো. দেওয়ান আলমগীর, পিকেএসএফের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ড. আকন্দ মো. রফিকুল ইসলাম, ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ্জামান, পিকেএসএফের ভ্যালুচেইন স্পেশালিস্ট মো. রাফিজুল ইসলাম মন্ডল ও তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা, তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি আবু সাঈদ চৌধুরী প্রমুখ।

এসকে দোয়েল/আরএআর