শাহ্ মো. আনোয়ার (৩৬)। দীর্ঘ প্রায় আট বছর একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। একপর্যায়ে প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। প্রেমিকা চেয়েছিল তাকে বিয়ে করতে। কিন্তু তাতে সায় দিতে পারেননি তিনি।

আনোয়ার ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের আজমত প্রধানীয়ার ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় আনোয়ার। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাই জাকির হোসেনও বিয়ে করে সংসার করছেন।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তার সেই প্রেমের নানান ঘটনা ঢাকা পোস্টকে জানান শাহ্ মো. আনোয়ার।

২০০১ সাল। তখন তিনি ১৪ বছর বয়সী কিশোর। বেড়াতে যান মামা বাড়ি পাশের মধুখালি উপজেলার একটি গ্রামে। সেখানে বেড়াতে গিয়েই এক কিশোরীর সঙ্গে দেখা। সেখান থেকে ভাব বিনিময়। এরপর একে অপরের আরও কাছাকাছি আসা। গড়ে উঠে একটি সম্পর্ক। এরপর চলে চিঠি চালাচালি।

আনোয়ার বলেন, আমার প্রেম চলাকালীন ভালোবাসা দিবস আসার ছয় মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত চিন্তা। বিশেষ করে ওই দিনে ভালোবাসার মানুষকে কী উপহার দেব? টাকা কোথায় পাব! অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও টাকার অভাবে তাকে পছন্দের উপহার কিনে দিতে পারতাম না। এমনও একটি ভালোবাসা দিবস গেছে, আমি আমার মামার শোপিস, মামী ও খালার চুলে ব্যবহার করার পুরাতন প্রসাধনী সামগ্রী চুরি করে নতুনের মতো পরিষ্কার করে প্যাকেট করে প্রেমিকাকে উপহার হিসেবে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমার প্রেমিকাই আমাকে ভালোবাসা দিবসে বেশি উপহার দিয়েছে। এছাড়া যখন সে স্কুলে উপবৃত্তির টাকা পেত তার বেশিরভাগ টাকাই আমার পেছনে খরচ করত, আমাকে উপহার কিনে দিত। আমি শুধু কয়েকটি লাল ও সাদা গোলাপের গাছ উপহার দিয়েছি তাকে।

সবাই তো প্রেমিকাকে প্রেমের স্মারক হিসেবে ফুল দেয় তিনি কেন ফুলগাছ দিতেন, জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, ফুল তো একসময় শুকিয়ে যায়। বেশি দিন টিকে না। এজন্য গাছ দিতাম। গাছে যখন প্রতিনিয়ত ফুল ফুটবে তখন সে আমার কথা মনে করবে। আমাকে নিয়ে ভাববে।

আনোয়ার বলেন, আমাদের দুজনের দেখা করার সুযোগ তেমন ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা দেখা করতাম। এভাবে ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে এসে তার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। সে আমার সঙ্গে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু এত বছর প্রেম করেও শুধুমাত্র বেকার হওয়ার কারণে আমার প্রেমকে সফলতার পথে নিয়ে যেতে পারিনি। বেকার অবস্থায় বিয়ে করে কীভাবে সংসার চালাব এবং হাজারো পিছুটানের কথা ভেবে সাহস হয়নি। এভাবেই দীর্ঘ ৭ বছর ১১ মাস ২১ দিন ৩১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের প্রেমের সম্পর্কের ইতি ঘটে।

তিনি আরও বলেন, আগে ভ্যালেন্টাইন বুকে ছিল, এখন চোখে। এখন প্রতি ভ্যালেন্টাইনে প্রেমিকার কথা মনে হয়, চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি পড়ে।

আনোয়ার বর্তমানে বেশ ভালোই আছেন। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন তিনি। তার ১১ বছর ও ৫ বছরের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

এবারের ভালোবাসা দিবসে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিয়ে করেছি, সন্তান হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় খুব কম। এখন সংসার নিয়ে ভাবতে হয়। এবার ভালোবাসা দিবসে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সারাদিন ঘোরার পরিকল্পনা রয়েছে।

এমজেইউ