ফরিদপুরে আদালত প্রাঙ্গণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার বাদীর সঙ্গে আসামি পুলিশ কর্মকর্তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর ভাঙ্গা উপজেলা সদরের ওই নারী (৩৩) অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগটি প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। এর আগে আদালত প্রাঙ্গণে ১০ লাখ টাকা দেন মোহরে পুলিশ কর্মকর্তা মো. সজল মাহমুদের (৪০)  সঙ্গে বিয়ে হয় ওই নারীর। বিয়ে পড়ান মো. মহিউদ্দিন নামে এক কাজি।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. সজল মাহমুদ ভাঙ্গা থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে গত ১১দিন আগে তাকে প্রশাসনিক কারণে ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে বদলি করা হয়।

বিয়ে পড়ানোর পর বাদীপক্ষের আইনজীবী আলোকেশ রায় ওই আদালতের পিপি স্বপন পালের মাধ্যমে আদালতে এএসআই সজল মাহমুদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ এবং এ ঘটনায় তার গর্ভবতী হয়ে পড়া, গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা, ভাঙ্গা থানার পুলিশ কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে কিছু কাগজপত্র ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর এবং মারপিট সম্পর্কিত অভিযোগটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের পিপি স্বপন পাল জানান, আদালত অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। 

বাদীপক্ষের আইনজীবী আলোকেশ রায় বলেন, বাদী অবিবাহিত ছিলেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। এর ফলে ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। নারীর গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় দেওয়াসহ ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বিয়ে করায় ওই নারী আদালতের কাছে অভিযোগটি প্রত্যাহারের আবেদন জানান।

অলোকেশ রায় জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতটি আট তলা ভবন বিশিষ্ট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ছয় তলায় অবস্থিত। মঙ্গলবার দুপুরে ওই আদালতের বাইরে বারান্দায় তাদের বিয়ে পড়ানো হয়।

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা সজল মাহমুদের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। 

লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, তিনি অবিবাহিত। তারা দুই বোন ও এক ভাই। মা ও বাবা মারা গেছেন। ২০০৬ সালে তারা দুই বোন জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যান। পরে তিনি দেশে এসে স্থায়ীভাবে বাড়িতে বসবাস করছেন। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর তার বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটলে তিনি ভাঙ্গা থানায় জানান। ২৪ অক্টোবর ভাঙ্গা থানার এএসআই মো. সজল রাতে বাড়িতে ঢুকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলার ছলে তার সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। একপর্যায়ে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। 

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে গ্রহণের জন্য ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জহির হোসেন/আরএআর